কলকাতা লাইভ: এক বছর নয়। দুই/তিন কিংবা চার বছন নয়। একেবারে দশ বছরের গল্প এটা। কোন সন্ত্রাসী নয়। কোন দাগী ক্রিমিনাল নয় নিরপরাধ মানুয়ের কস্টের কথা। তার জীবন থেকে ১০টি বছর কেড়ে নেয়ার দু:খ আর বেদনার স্টোরী। যা শুনলে অনেকেই তথাকথিত গনতন্ত্রের সেবকদেশেও যে মানুষ যুলম আর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারই একটা ছোট আলামত মাত্র।
জানাগেছে দীর্ঘ দশ বছর ভারতের কারাগারে থাকা নিরাপরাধ বন্দী বাদল ফারাজি গত শুক্রবার দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত বন্দী প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় বাদল প্রথম বন্দী হিসেবে তাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু বাদলের এই ফেলা খুব সহজে হয়নি।
২০১২ সালে ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় বাদলের ঘটনা নিয়ে প্রথম খবর প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশ হাইকমিশনও ভারত সরকারকে চিঠি লিখেছিল। কিন্তু ভারতের সরকারি স্তরে কোনও হেলদোল ছিল না।
২০১৬ সাল থেকে এক সমাজকর্মীর লড়াইয়ের ফলেই বাদলের দেশে ফেরা সম্ভব হয়েছে। দিল্লির এই সমাজ কর্মীর নাম রাহুল কাপুর। স্যোসাল মিডিয়ায় রাহুল কাপুরের এই লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজও তাকে চিঠি লিখেছেন। সুষমা লিখেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বন্দী বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী বাদল ফারাজিকে দেশে পাঠানোর বিষয়টি আমরা বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছি।
বাদল ফারাজির সঙ্গে রাহুলের দেখা হওয়াটাও বেশ নাটকীয়। এ ব্যাপারে রাহুল সোস্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আমি একজন সমাজকর্মী। আমার স্নাতকোত্তর সমাজ কর্মবিদ্যায় পাঠ্যক্রম অনুযায়ী আমি তিহার জেলে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে সোসাল ওয়ার্কের কাজ শুরু করি।
তিহার জেলেই (তিন নম্বর) আমি বাদল ফারাজির দেখা পাই। তিনি ভারতীয় নন। তিনি একজন বাংলাদেশি। সে তিহার জেলে আসে ২০০৮ সালের ২১শে জুলাই। সেই থেকে সে জেলে রয়েছে। তাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো এবং যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়ার ঘটনাটি আমি জানি যে কারো পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু ঘটনাটি একটি ’ট্রাজিক গল্প’, যেন সরাসরি বলিউডের সিনেমা থেকে তুলে আনা হয়েছে।
আসলে কারাগারে রাহুল বাদল ফারাজির কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, তাকে বানোয়াট মামলায় যুক্ত করে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সে যে নিরপারাধ সেকথা রাহুল নিশ্চিত হয়েই দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনে কিছু সহমর্মী মানুষকে নিয়ে বাদল ফারাজির মুক্তি দাবি জানিয়েছিলেন।
এরপর তিনি সোস্যাল মিডিয়ায় শুরু করেছিলেন, স্বাক্ষর অভিযান। আর সোস্যাল মিডিয়ায় তার এই লড়াইয়ের ফলেই ভারত সরকার নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়। তবে সমাজকর্মীদের মতে, বাদল ফারাজি নিরপারাধ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ১০ বছর জেল ঘাটতে হয়েছে। ভারতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদব- দেয়া হয়েছিল।
তবে বাংলাদেশে ফিরেও তাকে বন্দী জীবনই কাটাতে হবে। ভারতের আদালতে তার কোনও আবেদন করার সুযোগ নেই।
তবে বাংলাদেশের সমাজকর্মীরা তাকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেই বাদল ফারাজি নতুন জীবন ফিরে পেতে পারেন। তাছাড়া তিনি এভাবেই কস্টের জীবনের অবসান হবে।
নইলে দুখে দুখে মরতে হবে তাকে।
ঢাকা, ০৭ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: