রংপুর লাইভ: নির্মম। নিষ্ঠুর। পাষাণ্ড। খোদ মসজিদে এই কান্ড। মানুষ আর কোথায় আশ্রয় নিবে। এমন দাবী এখন রংপুরবাসীর মুখে মুখে। তোলপাড় চলছে এনিয়ে গোটা এলাককায়। মসজিদের ভেতরে মস্তকবিহিন লাশ! তাও আবার মাদরাসার ছাত্র! তার উপর হাফিজিয়া মাদ্রাসা। একথা মেনে নিতে পারছে না নিহত কিশোর তালহার পরিবার। শোকের মাতম চলছে গোটা এলাকায়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, রংপুরের ভগিবালা বউ বাজার এলাকার রহমানিয়া নুরানী হাফিজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ্ বোডিংয়ে এ এই নির্মম ঘটনাটি ঘটে।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম তানভীর আব্দুল্লাহ্ তালহার (১৪)। পুলিশ মস্তক উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে ওই মাদরাসা সংলগ্ন ভগিবালাপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রাচীর সংলগ্ন সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে মস্তকটি উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানান গুঞ্জন চলছে।
এদিকে তালহা হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই মাদরাসার শিক্ষকসহ ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভগিবালাপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলা থেকে তালহার মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আটকরা হলেন- ওই মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মেহেদী হাসান, সহকারী শিক্ষক হাফেজ ইমরান হোসেন, মসজিদের খাদেম নাজমুল হক, মোয়াজ্জিন তাসকিরুল ইসলাম, মাদরাসার শিক্ষার্থী আরমান, ফেরদৌস, আজাহার, রেজাউল করিম ও মানিক।
রহমানিয়া নুরানী হাফিজিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ্ বোডিংয়ের সভাপতি সামসুল হক ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, গত বুধবার দুপুরে বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে মাদরাসায় আসে তালহা। এরপর আসরের নামাজের ছুটিতে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেও বেরিয়ে যায়।
মাগরিবের নামাজের সময় তালহা মাদরাসায় অনুপস্থিত ছিল। এশার নামাজের সময় তালহা না আসায় বিষয়টি তার বাবা রংপুর সেনানিবাসে কর্মরত সার্জেন্ট খান জাহান আলীকে অবগত করা হয়।
পরে ওই রাতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের পিতা সার্জেন্ট খানজান আলী কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির সূত্র ধরে পুলিশ এসে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু করে।
একপর্যায়ে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় চট দিয়ে মোড়ানো মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধারের পর শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তালহার মাথা সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়।
সার্জেন্ট খানজান আলীর ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, রংপুর সেনাবাহিনীতে কর্মরত তার ভাই ভগিবালাপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। তার ভাইয়ের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তালহা সবার বড়।
একমাত্র মেয়ে রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ছোট ছেলে সেও ওই প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) সাইফুর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে জানান , গত বুধবার আসর নামাজের পর থেকে তালহা নিখোঁজ হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে মসজিদের দ্বিতীয় তলা থেকে তালহার মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, শুক্রবার স্থানীয়দের সহায়তায় নিখোঁজ মস্তক উদ্ধারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। একপর্যায়ে ভগিবালাপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রাচীর সংলগ্ন সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে লাল কাপড়ে মোড়ানো তার মস্তক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তবে সংশ্লিস্টরা ধারণা করছেন ছেলেটির ওপর নির্যাতন করার পর বিষয়টি জানাজানির ভয়ে এমনটি ঘটানো হতে পারে। তদন্ত চলছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে রিমান্ডে আনা হচ্ছে বলেও জানাগেছে।
ঢাকা, ০২ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: