জিহাদুল ইসলাম: উপজেলার সকল বিদ্যালয়ের বার্ষিক বরাদ্দের টাকা থেকে উৎকোচ দিতে হয় তাকে। প্রতিবাদ করলেই বিপদে ফেলা হয় বিভিন্ন ভাবে। শোকজ, বিভাগীয় মামলা রুজু সহ চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয় শিক্ষকদের। ভোলার চরফ্যাসন উপজেলা শিক্ষা অফিসার অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমনই অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ক্ষুদ্র মেরামত সহ বিভিন্ন ধরনের বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে ১০২ টি বিদ্যালয়ের নামে বিদ্যালয় প্রতি ২ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ আসে। ৬টি বিদ্যালয়ের নামে নীড বেজ বাবদ বিদ্যালয় প্রতি ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ আসে। ২১৩ টি বিদ্যালয়ের নামে স্লিপ বাবদ বিদ্যালয় প্রতি ৫০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ আসে। ২১২ টি বিদ্যালয়ের নামে প্রাক প্রাথমিক বাবদ বিদ্যালয় প্রতি ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ আসে। ২১২টি বিদ্যালয়ের নামে কোভিড-১৯ বাবদ বিদ্যালয় প্রতি ১২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ আসে। ওয়াসব্লক বাবদ বিদ্যালয় প্রতি ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ আসে।
এসব বরাদ্ধের টাকায় বিদ্যালয়ের কাজ হোক বা না হোক তা দেখার কেউ নেই। বরং বরাদ্দ কৃত টাকা উত্তোলন করতে হলে চরফ্যাশন উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে সর্ব নিম্ন ঘুষ দিতে হবে ক্ষুদ্র মেরামত থেকে বিদ্যালয় প্রতি ১০ হাজার টাকা। নীড বেজ থেকে বিদ্যালয় প্রতি ৭ হাজার ৫ শ' টাকা। রুটিন মেইনটেন্যান্স থেকে বিদ্যালয় প্রতি ২ হাজার টাকা। প্রাক প্রাথমিক থেকে বিদ্যালয় প্রতি ৫শ' টাকা। ওয়াসব্লক থেকে বিদ্যালয় প্রতি ৫শ' টাকা। কোভিড -১৯ বরাদ্দ থেকে বিদ্যালয় প্রতি ৫ শ' টাকা। এসব টাকা দিলেই উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রকোশলী অফিসার মোশাররফ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট ক্লাষ্টার অফিসারের প্রত্যায়নের মাধ্যমে কাজের মান সন্তোষজনক আছে মর্মে প্রত্যায়ন সংযুক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদনের মাধ্যমে চেক প্রদান করে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তলন করা হয়।
আমিনাবাদ মাদারতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাছ উদ্দিন জানান, শিক্ষা অফিসার অনেক প্রধান শিক্ষক কে বাধ্য করেন ক্ষুদ্র মেরামত সহ বিভিন্ন বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাত করার জন্য। আমি এসবে তার সাথে একমত হতে না পারায় বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তিনি আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে আসছে প্রায়ই। আমি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।
তিনি আরও জানান, গত ০৪ সেপ্টেম্বর আমি এবং চরফ্যাশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বাসায় একটা বিষয়ে দেখা করতে যাই। তিনি বলেন পরের দিন সকাল ১১টায় অফিসে আসতে। পরের দিন আমি এবং ফরিদ উদ্দিন সহ শিক্ষা অফিসে যাই। অন্যদিকে তিনি সহকারী শিক্ষা অফিসার আশরাফ হোসেন কে আমার বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে কাউকে কিছু না বলে শিক্ষক হাজিরা খাতা এবং মাসিক চলমান রিটার্ন নিয়ে আসে। পরে আমি, সহকারী শিক্ষা অফিসার আশরাফ হোসেনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যা হয়েছে শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে হয়েছে। আমি শিক্ষা অফিসার অহিদুল ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করিলে তিনি বলেন ৫০ হাজার টাকা ম্যানেজ করেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর ডাকযোগে শিক্ষক হাজিরা খাতা এবং মাসিক চলমান রিটার্ন ফেরত পাওয়ার আবেদন করি। তবে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতা এবং মাসিক চলমান রিটার্ন দিচ্ছে না তিনি।
শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন জানান, আমি আর আব্বাছ উদ্দিন শিক্ষা অফিসারের বাসায় যাই এবং পরের দিন শিক্ষা অফিসে যেতে বলেছেন তাও গিয়েছি। শিক্ষা অফিসার অস্বীকার কেনো করেছে তা বলতে পারিনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, এই স্যার টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেনা অর্থবছরের এসব বাজেটের টাকা সহকারী শিক্ষকরা যানে না, এসব টাকা হাতিয়ে নেয়, প্রধান শিক্ষক কে বাধ্য করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে না চাইলেও বিদ্যালয়ের এক দপ্তরী বলেন, যদি একটা আলমারি কিনে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে তবে বাউচার দিতে হয় ৫০ হাজার টাকার। কারণ প্রধান শিক্ষক থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পারসেন্টেজ নিয়ে যায়।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার অহিদুল ইসলাম সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, এসব বিষয়ে কিছুই যানেন না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে অবগতি না করে উপজেলা শিক্ষা অফিস কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতা ও মাসিক চলমান রিটার্ন নিয়ে আসতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অবশ্যই আনতে পারবেন।
তবে শিক্ষা অফিসারের বাসায় এবং পরের দিন শিক্ষা অফিসে আব্বাছ উদ্দিন গিয়েছে সেটার প্রমাণ মিলেছে একটি অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে।
ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেডআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: