অসম প্রেম। কখনও পরিবারে আনে শান্তি ও সমৃদ্ধি। আবার অধিকাংশ সময় অসম প্রেমের জের টানতে হয় প্রেমিক যুগলকে। প্রেমিক যুগল নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তারা বলেছেন- অসম প্রেমের শেষ গন্তব্য ভয়ংকর পথ। তার মানে আত্মহত্যা। আর এই স্খলন কখনও পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কল্যাণ বা শান্তি বয়ে আনতে পারে না। তাদের সাফ কথা- অসম প্রেমের বলি বা শিকার হন প্রেমিক যুগল। আর স্বজনরা বেঁচে থাকেন কষ্ট, যন্ত্রণা আর নানান সমালোচনা নিয়ে। বলছিলাম পিরোজপুরের এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও অপর একজন ব্যবসায়ীর অসম প্রেমের কথা। দুই পরিবার থেকেই ভিন্ন অবস্থানেই ছিলেন তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ওই প্রেমিক যুগলকে শেষমেশ বেছে নিতে হয়েছে আত্নহননের পথ।
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় কবরস্থানে বসে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন ওই যুগল। একজনের নাম মারিয়া খানম আর প্রেমিকের নাম ইয়াসিন। উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের উত্তর কলারদোয়ানিয়া গ্রামের চানদকাঠী এলাকায় এই নির্মম আত্নহননের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার ভোরে তাদের মৃত্যু হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে প্রেমিকার বাড়ির সামনের কবরস্থানে বসে তারা বিষপান করেন বলে দুই পরিবারের পক্ষ হতে দাবি করা হয়েছে।
প্রেমিক ইয়াসিনের বাবা জানান, ইয়াসিন কয়েকদিন আগে তার ফুফা (ভগ্নিপতি) মোজাম্মেল হক হাওলাদারের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফুফাতো ভাই সাব্বিরের সঙ্গে তার দোকানে ঘুমাতে যায়। কিন্তু দোকানের ভেতর গরম লাগার কথা বলে সেখান থেকে সে বের হয়। রাত ৩টার দিকে ইয়াসিনের ফুফু সাবিনা ইয়াসমিন ফোন করে জানান, ইয়াসিন ও বাড়ির পাশের এক মেয়ে একসঙ্গে বিষপান করেছে।
এদিকে নিহত মারিয়া খানমের মা শামীমা নাছরিন জানান, মারিয়া রাতের খাবার খেয়ে ১০টার দিকে তার ঘরে ঘুমাতে যায়। পরে রাত ২টার দিকে বাড়ির সামনের কবরস্থান থেকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুনে ঘুম ভঙ্গে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি মারিয়া ও ইয়াছিন অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মারিয়াকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর কিছুক্ষন পরেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইয়াছিনেরও মৃত্যু হয়। নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক অসিত মিস্ত্রি বলেন, মারিয়াকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আর ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইয়াছিনের মৃত্যু হয়।
এলাকাবাসী ও ওই প্রেমিক যুগলের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসা ছাত্রী মারিয়া খানম নাজিরপুরের উত্তর কলারদোয়ানিয়ার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তিনি উপজেলার মুগারঝোর দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর প্রেমিক ইয়াছিন তালুকদার (১৮) পিরোজপুর জেলার নেছারবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের উলিবুনিয়া গ্রামের হাফিজ তালুকদারের ছেলে। ইয়াছিন তার বাবার সঙ্গে ধান-চালের ব্যবসা করেন। নিহতরা সম্পর্কে একে অপরের আত্মীয়।
এ বিষয়ে নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানান, কি বিষয়ে এই আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটেছে সেই কারণ নিয়ে নিহতদের পরিবারের কেউ মুখ খুলছেন না। তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
ঢাকা, ২২ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: