লাইভ প্রতিবেদক: ছাত্রলীগের সাইনবোর্ড নিয়ে ব্যবসায় নামেন দুই নেত্রী। হলের সিট বাণিজ্য ছিলো তাদের একটা মিশন। বলার কেউ নেই। এছাড়া ক্যান্টিন বাণিজ্য, ওয়াইফাই বাণিজ্য ও আরো কিছু নোংড়া পথের আয় যেন তাদের পেয়ে বসেছিল। মুখ খুললেই শাস্তি নেমে আসতো। অমানসিক নির্যাতন, র্যাগ এমনকি নগ্ন করতেও এদের মনে এতোটুকু খারাপ লাগতো না। সেই নেত্রীরা হলেন ইডেন কলে ছাত্রলীগ সভাপতি রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা। কমিটি পাওয়ার পর থেকেই ইডেন ছাত্রলীগ সভাপতি রিভার বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে গণমাধ্যমে। শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাসহ তাদের অনুসারিদের বিরুদ্ধে। এর পর সব কিছু বের হতে থাকে।
এই মারধরের ছাত্রলীগের একটি অংশ প্রকাশ্যে নানান সমালোচনা করতে থাকে। এর পর গণমাধ্যমে উঠেছে এসেছে রিভার সিটবাণিজ্য, ওয়াইফাই প্রোভাইডারে চাঁদাবাজি, ক্যান্টিন থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে নানান তথ্য। এনিয়ে দফায় দফায় বাকযুদ্ধের পর প্রকাশ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
ইডেন কলেজের একাধিক ছাত্রী জানিয়েছেন, কলেজের ছয়টি হলের মোট ৩৮টি কক্ষ রিভার দখলে রয়েছে। কক্ষগুলোতে টাকা বিনিময়ে ছাত্রীদের রাখছেন তিনি। এর মধ্যে হলের প্রতিটি কক্ষে কমপক্ষে আটজন করে মোট ৩২০ জন ছাত্রীকে রাখছেন তিনি। এ জন্য ছাত্রীদের থেকে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা করে নিয়ে থাকেন রিভা। এ ক্ষেত্রে শুধু সিটবাণিজ্য করেই রিভার মাসিক আয় ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এসব তথ্য জানালেন শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস ও তার সহযোগীরা।
তবে রিভার আয় এখানেই শেষ নয়, প্রতিমাসে ওয়াইফাই প্রোভাইডারের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করেন রিভা। আগস্ট মাসেই ওয়াইফাই প্রোভাইডারের থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া হলের চারটি ক্যানটিন থেকেও চাঁদা নেন রিভা।
চারটি ক্যানটিন থেকে শাখা ছাত্রলীগের এ দুই নেত্রী প্রতিমাসে ২ লাখ ৪০ টাকা চাঁদা আদায় করেন। তবে এ টাকা ভাগাভাগি নিয়েও রয়েছে নানান অভিযোগ-অন্তর্কোন্দল। এদিকে শনিবার রিভা-রাজিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তিকর অবস্থার ছবি তোলার অভিযোগও তুলেছেন সহসভাপতি জান্নাতুল।
জানা গেছে, ইডেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিটবাণিজ্যসহ নানান বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন ছাত্রলীগ নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী। এরপরই তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। নির্যাতনের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
এরপরই তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। নির্যাতনের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তারা রিভা বাহিনীর বিরুদ্ধে এক হতে থাকে।
এক পর্যায়ে মিছিল ও সমালোচনা প্রকাশ্যে চলে আসে। এ সময় তারা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। এ ঘটনায় রাতের আঁধারে জনরোষের মুখে হল ছেড়ে পালিয়ে যান সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা। গতকাল সারাদিন তাদের মোবাইলেও সন্ধ্যান মিলেনি। মোবাইল বন্ধ করে তদবীরে নেমেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে তথ্য মিলেছে।এদিকে শনিবার রিভা-রাজিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তিকর অবস্থার ছবি তোলার অভিযোগও তুলেছেন সহ-সভাপতি জান্নাতুল।
রিভা ও রাজিয়ার বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ তুলেছেন ওই কলেজের শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, জান্নাতুলের ওপর সহিংস আচরণ নতুন নয়। আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে।
বৈধ রুমের মেয়েরা উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করার সময় সভাপতির (তামান্না জেসমিন রিভা) অনুসারীরা তাদের ছবি তুলে রাখেন। পরে সেখান থেকে সুন্দরীদের বাছাই করেন। পরে বাছাইকৃত মেয়েদেরকে রুমে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে খারাপ উদ্দেশ্যে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। কারণ, তারা ওই মেয়েদেরকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করাতে চান।
কিছুদিন আগে একজন মেয়ে কান্না করতে করতে এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন উল্লেখ করে বৈশাখী বলেন, কলেজের কর্মকর্তারা সবাই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তারা জব্দ। তিনি আরও বলেন, দলের সুনাম যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেজন্য এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিন দিন এমন বৈরী আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে যাবে।
সামিয়া আক্তার বৈশাখী বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাহায্য না করে আমরা যদি সিটবাণিজ্য, মেয়ে বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করি, তাহলে তো ইডেন কলেজেরও বদনাম হবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাকে নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেওয়ার একটি অডিও গণমাধ্যমকে ফাঁস হয়।
যদিও পরে এ নিয়ে ক্ষমা চান তিনি। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় চার দিন পর রিভার বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
এ বিষয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন দিলে তারা ফোন উঠায়নি। বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাসসহ ছাত্রলীগ ও মুল দলেও আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।
ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: