কুবি লাইভ: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আবাসিক হল বন্ধ এবং পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকালের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে রোববার (২ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় অনলাইনে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী পড়েছেন বিপাকে। শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে সৃষ্টি হয়েছে নানান আতঙ্ক। উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। গতকাল এক পক্ষ অর্ধশত মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এসময় বাজি ফাটানোর শব্দও শুনা যায়।
উদ্ভুত পরিস্থিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার সার্থে হল সিলগালা করাসহ বেশ কিছু জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রবিবার (২ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী সাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমূহ বন্ধ থাকবে, ছাত্র হলসমূহে অবস্থানকারী ছাত্রদের ২ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে হল ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো, ছাত্রী হলসমূহে অবস্থানকারী ছাত্রীদের ৩ অক্টোবরের (সোমবার) সকাল ৯ টার মধ্যে হল ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
এছাড়া আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষাসমূহ স্থগিত থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের নিজস্ব পরিবহন ব্যতীত সকল ধরনের পরিবহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
প্রসঙ্গত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি (ইলিয়াস-মাজেদ) বিলুপ্তির পর অর্ধশতাধিক মোটর সাইকেল নিয়ে শোডাউন ও বাজি ফুটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের এক পক্ষের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১ অক্টোবর) দুপুর ৩ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে বহিরাগতদের শোডাউন দিতে দেখা যায়। এর পাশাপাশি হলের সামনে বাজি ফুটানো হয়। এক সময় মোটরসাইকেল আরোহীদের মধ্য থেকে কয়েকজন বঙ্গবন্ধু হলের তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যেতে দেখা যায়।
এ সময় মোটরসাইকেল শোডাউনের প্রেক্ষিতে সদ্য সাবেক কমিটির নেতা-কর্মীরা হল থেকে রামদা, লাঠি, রড নিয়ে বের হয়ে আসে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীসহ প্রক্টরিয়াল বডির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত হলে মোটরসাইকেল আরোহীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি মূল ফটকে পুলিশ মোতায়েন করে।
এতগুলো মোটর সাইকেল ক্যাম্পাস এরিয়ায় ঢুকলো কীভাবে, এমন প্রশ্নে মূল ফটকে দায়িত্বরত আনসার জালাল মিয়া বলেন, আমরা গেটেই ছিলাম। কিন্তু এত সংখ্যক মোটর সাইকেল একসাথে এসে নিজেরাই গেট খুলে ঢুকে গিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক কমিটির নেতাকর্মীরা দাবি করেন, ক্যাম্পাসে হল দখল করতে এবং শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্কিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকা ছাত্রলীগের একটি পক্ষ এমন কাজ করেছে। এ সময় কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমানকে শোডাউনে দেখা যায়। সাবেক কমিটির নেতারা এ জন্য মিজানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এছাড়া গতকালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রক্রিয়াল বডির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকি। তিনজন সহকারী প্রক্টরের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন সহযোগী অধ্যাপক মোঃ জাহিদ হাসান, মোঃ মোশাররফ হোসেন এবং শারমিন সুলতানা। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসপর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কমিটি 'বিলুপ্তি'কে কেন্দ্র করে গতকাল (১ অক্টোবর) ফাঁকা গুলি ককটেল বিস্ফোরণ করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ অস্ত্র মহড়া দেয় ক্যাম্পাসে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ঢাকা, ০২ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: