কুবি লাইভ: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা নিয়ে আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। বিলুপ্তি ঘোষণা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক পেইজ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাত ১১ টা ৪৯ মিনিটে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আধাঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক ওয়াল থেকে তা আবার সরিয়ে নেওয়া হয়। কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্বাহী সংসদের একাধিক নেতার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের মধ্যে তথ্যগত পার্থক্য দেখা দেয়।
রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এমন ধোঁয়াশা সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টা পাল্টি অস্ত্র মহড়া, শোডাউন এবং গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায় কমিটি বিলুপ্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১ অক্টোবর (শনিবার) দুপুর ২টায় আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা এলাহীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা কয়েকটি ককটেল ফুটিয়ে মোটর সাইকেলে শোডাউন দেয় । এ ঘটনার পর বর্তমান কমিটি সভাপতি ইলিয়াস মিয়ার অনুসারীরা ক্যাম্পাসে রামদা ও দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে বহিরাগতদের শোডাউন দিতে দেখা যায়। এর পাশাপাশি হলের সামনে বাজি ফুটানো হয়। এক সময় মোটরসাইকেল আরোহীদের মধ্য থেকে কয়েকজন বঙ্গবন্ধু হলের তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যেতে দেখা যায়। এ সময় মোটরসাইকেল শোডাউনের প্রেক্ষিতে সদ্য সাবেক কমিটির নেতা-কর্মীরা হল থেকে রামদা, লাঠি, রড নিয়ে বের হয়ে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেল মহড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা এ এলাহী সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতা মাহি হাসনাইন, ইকবাল খান, আমিনুলসহ বহিরাগতরা অংশ নেন। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আগামী কমিটিতে পদপ্রত্যাশী রেজা- ই- ইলাহী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমাদের কেউ সেখানে যায়নি। তারাই হামলা করে আমাদের দায় দিচ্ছে।
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীসহ প্রক্টরিয়াল বডির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত হলে মোটরসাইকেল আরোহীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি মূল ফটকে পুলিশ মোতায়েন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক কমিটির নেতাকর্মীরা দাবি করেন, ক্যাম্পাসে হল দখল করতে এবং শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্কিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকা ছাত্রলীগের একটি পক্ষ এমন কাজ করেছে। এ সময় কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমানকে শোডাউনে দেখা যায়।
প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিক ক্যাম্পাস লাইভকে বলেন, আমরা আজকের ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মিটিং করেছি এবং তাদের বলেছি এমন ঘটনার জন্য তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করা হবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে শিক্ষার্থীরা দাবি করে কিছু নাম দিবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিয়ম আছে কাওকে ব্যক্তি আক্রমণ করে মামলা করতে পারে না।
তারা এ বিষয়ে মানতে নারাজ হয়ে চলে গিয়েছে। আজকের ঘটনা নিয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন সদস্যের প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবং কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দু'গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে আতঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
ঢাকা, ০১ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: