লাইভ ডেস্ক: দীর্ঘদিনের কঠোর প্রস্তুতিতে একটু একটু করে স্বপ্ন বুনেন বিসিএস পরীক্ষার্থীরা। সেই পরিশ্রম স্বার্থক কি না সেটা প্রমাণ পায় প্রতিযোগিতার মঞ্চে। কিন্তু সামান্য কারণে সেই প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিজেকে প্রমাণিত করার সুযোগই পেলেন না ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষার্থী ডালিয়া নওশীন।
পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের মাত্র দুই মিনিট পরে কেন্দ্রে আসায় পরীক্ষার হলে ঢুকতেই পারেননি নওশীন। শত অনুনয়-বিনয় করেও কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্তারা। প্রায় আধা ঘণ্টা গেটে অপেক্ষা করে অশ্রুসিক্ত চোখেই ফিরতে হলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে।
শুক্রবার (২৭ মে) সকালে রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিতে এসে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন এ পরীক্ষার্থী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা নওশীনের ৪৪তম বিসিএস ছিল তার শেষ বিসিএস পরীক্ষা। কিন্তু সেখানে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই পেলেন না তিনি।
পরীক্ষায় অংশ নিতে বৃহস্পতিবার রাতেই কুমিল্লা থেকে যাত্রাবাড়ীতে এসে এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন নওশীন। সকালে কিছুটা অসুস্থ বোধ করা নওশীন ঢাকার যানজট উপেক্ষা করে সকালে রিকশা নিয়ে বের হন পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশে। কিন্তু রিকশাচালক ভুলে অন্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখান থেকে নিজের কেন্দ্রে আসতে দুই মিনিট বিলম্ব হয় নওশীনের। আর তাতেই পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি দায়িত্বরতরা। চোখের পানিতে বারবার অনুনয়-বিনয় করেও প্রবেশের অনুমতি পাননি নওশীন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নওশীন বলেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠেই প্রেসার কম থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিছুটা সুস্থ হয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় বাসা থেকে বের হই। পরীক্ষা কেন্দ্র আমি ঠিক চিনি না। প্রথমে বাসে আসতে চেয়েছিলাম, বাসে উঠতে পারিনি। পরে এক রিকশাচালককে কলেজের (পরীক্ষাকেন্দ্রের) নাম বলে জিজ্ঞেস করলাম তিনি চেনেন কি না। তিনি চেনেন বলে জানান। রিকশায় ওঠার পরও একাধিকবার জিজ্ঞেস করেছি। তখনো তিনি বললেন কলেজ তার চেনা। অথচ তিনি নিয়ে গেলেন অন্য এক কেন্দ্রে। এ কারণে কেন্দ্রে পৌঁছাতে ২ মিনিট দেরি হয়ে যায়। অনেকবার রিকোয়েস্ট করেছি, কিন্তু আমাকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হলো না বলেই... আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নওশীন।
ওই কেন্দ্রের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা এক অভিভাবক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, মাত্র দুই মিনিট দেরি করে কেন্দ্রে এসেছিল সে। তার বাসা কুমিল্লায়। ঢাকা শহর সেভাবে চেনেও না মেয়েটা। আমরা গেটে বহুবার অনুরোধ করেছি তাকে যেন অন্তত ঢুকতে দেয়া হয়। কিন্তু গেটে দায়িত্বরতরা অনুরোধ শোনেননি। শত অনুরোধেও মেয়েটাকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি।
আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশের সকল বিভাগে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এর আগে পিএসসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, পরীক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা ২৫ মিনিটের মধ্যে নিজ নিজ কেন্দ্রে আসন গ্রহণ করতে হবে।
কিন্তু ডালিয়া নওশীন পরীক্ষা শুরুর ২ মিনিট পর অর্থাৎ সকাল ১০টা ২ মিনিটে পরীক্ষাকেন্দ্রের গেটে উপস্থিত হন। আর সে কারণেই তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতেই শেষ বিসিএসটিতেও নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেলেন না নওশীন। ফলে দীর্ঘদিনের কল্পিত বিসিএস স্বপ্ন ভঙ্গ হলো নওশীনের।
ঢাকা, ২৭ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: