কুবি লাইভ: ১ আগস্ট ২০১৬ ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যার প্রচ্ছন্ন ইন্ধনদাতা এবং গত কয়েক মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বাসা ও ডরমেটরিতে চুরি ও হামলার পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলী আশরাফ নিজেই বলে উল্লেখ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এরই সাথে এসব ঘটনার কোন ধরনের বিচার না করে প্রকাশ্যভাবে এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হওয়ায় উপাচার্যকে জরুরি অপসারনের দাবিও জানায় তারা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, সীমানা প্রাচীর, একাডেমিক ভবনগুলোর নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজগুলো এগুচ্ছে কচ্ছপের গতিতে। এসব ক্ষেত্রে উপাচার্য কোন ধরনের তদারকি বা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন না বলে অভিযোগ করে শিক্ষক সমিতি আরও জানায়, অনিয়মতান্ত্রিক ও অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আত্মীয়করণ করেছেন উপাচার্য। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্ল্যানিং কমিটির পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ ব্যতিত ইতিপূর্বে প্রচারিত সকল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও অনিয়মতান্ত্রিক সকল নিয়োগ যা সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ এবং ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগে ঘটেছে তা বাতিলের দাবি জানায় তারা।
গত ৮ মার্চ থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে অফিস করতে না দিয়ে তার অপসারনের দাবিতে অনড় রয়েছে শিক্ষক সমিতি। ফলে গত ৯দিন ধরে উপাচার্য তার নিজের বাসভবনে অফিস করছেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখেই আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ছাত্র হত্যা, শিক্ষক ও তাদের পরিবারের উপর পরিকল্পিত হামলা, বিভাগীয় প্রধান কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্চনাসহ এ যাবতকালে ঘটিত কোন ঘটনারই সুষ্ঠু কোন বিচার উপাচার্য করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ যেন এক বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরী হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ধরনের অগ্রগতি সম্ভব নয়।’
নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ জন শিক্ষক কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় গণ জিডি করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। যার ফলে গত ০৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ডরমেটরি তিন জন শিক্ষক এবং ২ জন কর্মকর্তার আবাসিক কক্ষে হামলা চালিয়ে নগদ অর্থ ও ল্যাপটপ নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এ ঘটনাকে ‘নিছক চুরি’ বলে আখ্যায়িত করে থানায় দায়সারাভাবে একটি ‘চুরির মামলা’ দিয়ে ঘটনার গুরুত্বকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঢাকার চেষ্ঠা করেছে বলে জানায় শিক্ষক সমিতি।
জানতে চাওয়া হলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, ‘উপাচার্যের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের নিরাপত্তা প্রদান এবং অপরাধীদের বিচারে শাস্তির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা তার প্রশাসনিক অদক্ষতার পরিচয়। এজন্য আমরা তাকে ক্যাম্পাসে ‘অবাঞ্চিত’ ঘোষণা করেছি। একই সাথে আমরা দ্রুত তাকে অপসারনের দাবি জানাচ্ছি। উপাচার্যের অপসারনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো: আলী আশরাফ বলেন, ‘আমাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি গোষ্ঠী আমাকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছে যাতে সবার সায় নেই। প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায়ভার শুধু আমাকে নিতে হবে কেন? যারা এখন আন্দোলন করছেন তারাও ইতিপূর্বে বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। ফলে তাদেরকেও ব্যর্থতার দায়ভার নিতে হবে।’
ঢাকা, ১৬ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: