লাইভ প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র আবদুর নূর। ঘুরে বেড়ানোই তার নেশা। আর একারণে তার এলাকায় তিনি ‘বাংলার ইবনে বতুতা’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৬০টি জেলার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি।
তবে এ ঘুরে বেড়ানোই কাল হয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ওই তরুণের। গত বছরের জুলাই মাসে তিনি মাগুরার শালিখা উপজেলায় শতখালী গ্রামে এসেছিলেন চণ্ডীদাস ও রজকীনির জন্মস্থান ও ঘাট দেখতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। জঙ্গি সন্দেহে শালিখা থেকে আটক হন নূর। জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ছাত্রত্বও স্থগিত করে। এরপর ৫১ দিনের হাজতবাস শেষে জামিনে মুক্তি পান তিনি। এর মধ্যে ৭ দিনের রিমান্ডেও ছিলেন। মামলার হাজিরা, পটিয়া-মাগুরা যাওয়া-আসা, মানসিক চাপ সব মিলিয়ে তার পুরো পরিবারকেই পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি।
একের পর ভোগান্তি শেষে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। নূরের জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি জানিয়ে মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। ২৪ জানুয়ারি আদালত তাকে অব্যাহতির আদেশ দেন।
অাবদুর নূর ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, আমি জঙ্গি তকমা থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু আমার শিক্ষাজীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে গেছে। জানি এটা কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। সবকিছু ভুলে আবারও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি এখন আগের মতই ঘোরাঘুরি অব্যাহত রেখেছি। আমি আমার মতই থাকতে চাই। এক পর্যায়ে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন। আমাকে যখন আটক করা হয় তখন ক্যাম্পাসলাইভের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছিল যা আমাকে অনেক উপকারে দিয়েছে।
এদিকে মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটা শংকায় রয়েছেন তিনি। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন তার। কিন্তু এটা সফল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।
জানা গেছে, আবদুন নূর চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী আবদুর রশিদের ছেলে।
গত বছর ১৩ জুলাই মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী এলাকা থেকে তাকে সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে আটক করে পুলিশ। এরপর ১৪ জুলাই জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শালিখা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। ১৬ জুলাই তাকে ৭ দিনের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
নূর জানান, খুব বেশি সক্রিয় না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনসিসির প্রশিক্ষিত ক্যাডেট তিনি। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য। পারিবারিকভাবে তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক। চট্টগ্রামের পটিয়ায় নিজেদের এলাকায় জামায়াতবিরোধী হিসেবেও পরিচিত তার গোটা পরিবার। লেখাপড়ার পাশাপাশি তার নেশা ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানো। নূর জানান, তার বাবা সৌদি আরব প্রবাসী। মা, ছোট এক ভাই, এক বোন নিয়ে তাদের সংসার। অপর এক বোনের বিয়ে হয়েছে কিছু দিন আগে।
চবি ছাত্র নূর জানান, চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে ২০১৬ সালের ৯ জুলাই তিনি কুষ্টিয়া আসেন। কুষ্টিয়া শহর ঘুরে চলে যান লালন শাহর মাজার, শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িতে। পরে মেহেরপুরের মুজিবনগর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ হয়ে ১২ জুলাই যান নড়াইলে। চিত্রা নদী, জমিদারবাড়ি, এসএম সুলতানের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পর দিন ১৩ জুলাই সকালে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী গ্রামে আসেন। শতখালী বাজারে পৌঁছালে এলাকাবাসী তাকে সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে নানা প্রশ্ন করতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শালিখা থানা পুলিশে ফোন করেন। পুলিশ এসে মোটরসাইকেলচালকসহ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে নেওয়া হয় মাগুরা জেলা সদরে পুলিশ অফিসে। সেখানে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকতারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু সে সময়ে দেশের চলমান পরিস্থিতে কারও কাছেই তিনি নিজের প্রকৃত অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেননি। তাই মোটরসাইকেলচালককে পুলিশ ছেড়ে দিলেও জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগের তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। তাকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচার হয়।
নূর বলেন, মামলা, পুলিশ রিমান্ড, হাজতবাস তাকে যতটা না শারীরিক কষ্ট দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি মানসিক যন্ত্রণায় রয়েছেন ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রচণ্ড জঙ্গিবাদবিরোধী নূর মামলায় নির্দোষ প্রমাণ হলেও এ ঘটনা ভবিষ্যতে তার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কি-না তা নিয়েই দুশ্চিন্তা তার।
ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: