লাইভ প্রতিবেদক: খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কুমিল্লা টিলা এলাকায় ২০০৮ সালে গ্রামবাসীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘কে আই হাই স্কুল’। নামমাত্র বেতনে প্রধান শিক্ষকসহ নয়জন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। এত দিন ধরে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো পৌরসভা ও জেলা প্রশাসকের উন্নয়ন তহবিল থেকে।
কিন্তু নয় মাস ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় এক মাস ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না কোনো শিক্ষক। ফলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ১৮৫ জন শিক্ষার্থী পাঠদান বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে এসেও শিক্ষক না থাকায় ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।
১৮৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জেএসসি পরীক্ষার্থী ৫৩ জন ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৮ জন। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এলেও শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। গত বছর এই বিদ্যালয়ের জেএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৬০ শতাংশ এবং এসএসসিতে পাসের হার ৬৫ শতাংশ, যা জেলার অনেক মানসম্মত বিদ্যালয়ের ফলাফলের সমতুল্য।
স্কুল রক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আসাদ উল্লাহ্ বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এলাকাবাসী মিলে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছি। তবে দীর্ঘ নয় মাস ধরে বেতন–ভাতা না পাওয়ার কারণে ঈদুল আজহার আগে শিক্ষকেরা অব্যাহতি নিয়েছেন।’
এলাকার বাসিন্দা কার্বারি পূর্ণমণি ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে গেলে এলাকার হতদরিদ্র শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে, কেননা এই গ্রামের আশপাশে আর কোনো বিদ্যালয় নেই। দশম শ্রেণির ছাত্রী সামসুন নাহার বলে, কিছুদিন পর পরীক্ষা শুরু হবে অথচ ক্লাস না হওয়ার কারণে প্রস্তুতি নিতে পারছে না।
অভিভাবক মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়ে এই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থী। তবে বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক না থাকায় প্রতিদিন বিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে।’
প্রধান শিক্ষক সাইফুদ্দিন আবু আনসারী বলেন, বিদ্যালয়ে মাসিক ব্যয় আনুমানিক ৩৫ হাজার টাকা। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই অসচ্ছল পরিবারের হওয়ায় নির্ধারিত ফি সময়মতো পরিশোধ করতে পারে না। শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারার কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন মহলে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘পৌরসভার উন্নয়ন তহবিল থেকে আমি এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু জেলা প্রশাসক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তা দিতে পারছি না।’
জেলা প্রশাসক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়টি দেখভাল ও সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইটিসি) এ টি এম কাউছার হোসেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি শিগগিরই যেন শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যায়।’
ঢাকা, ১২ অক্টোবর, (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: