চবি লাইভ: সুপ্রিয় পাঠক, অবিরত মুক্তোদানা ঝরতে দেখেছেন কখনো? পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা মুক্তা? যদি দেখতে চান, তবে ঘুরে আসুন খৈয়াছড়ায়। যেখানে আকাশ,পাহাড় আর জলের অদ্ভুত মিলনমেলা বসেছে। ছড়ার শীতল পানিতে পা ডুবিয়ে স্বপ্নের ভেলায় ভেসে যাবেন। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার বরতাকিয়া ইউনিয়নের খৈয়াছড়া এখন ভ্রমণ বিলাসীদের মুখে মুখে।
এরই ধারাবাহিকতায় ৭ অক্টোবর খৈয়াছড়ায় হাজির হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ কে খান হয়ে মিরসরাই পৌঁছানোর পর ভ্রমণ ক্লান্তি এসে ভর করে। বাহন থেকে নেমে নাস্তা সেরে পৌঁছালাম বরতাকিয়া ইউনিয়নে। সেখান থেকে সি এন জি করে কিংবা হেঁটেই যাওয়া যায় খৈয়াছড়ায়।
গভীর আনন্দে আমরা হেটেই গেলাম। এখানে এসেই বুঝলাম শেষ নয় বরং শুরু। পায়ে হাঁটা পথ ধরে ঘন্টা খানেক এগিয়ে গেলাম ছড়ার গা বেয়ে। ঠান্ডা পানিতে পা ডুবিয়ে ধিরে ধিরে হেঁটে চলেছে সবাই। পথে যেতে যেতে অবশ্যই ছোট ছোট বাঁশ বিক্রেতাদের সাথে দেখা। ভাজ্ঞিস ১০ টাকা দিয়ে একটি করে বাঁশ নিতে ভুল হয়নি। পঞ্চাশ মিনিট পর একটু কান পাততেই শোনা গেল ঝর্ণার গর্জন। খানিক পর চোখের সামনে পাখা মেলল সুবিশাল ঝর্ণা, খৈয়াছড়া ঝর্ণা।
প্রিয় পাঠক, খৈয়াছড়া ঝর্ণার পথে বেশ কয়েকটা হোটেল দেখতে পাওয়া যায়। সকালের দিকে রওনা দিলে ফিরে আসতে বিকেল হবে। তাই দুপুরের খাবার সাথে নিতে পারেন। অথবা হোটেলে অর্ডার দিতে পারেন। আমরা একটি হোটেলে খাবারের অর্ডার দিয়ে গিয়েছিলাম।
পাঠক, ঝর্ণার নীচে পৌঁছে ঠান্ডা পানিতে গা ভিজিয়ে যদি ভাবেন দেখা শেষ তবে ভুল ভাবছেন। অবাক হবেন শোনে যে, আপনার চোখের সামনের ঝরণাটি ১১স্তরের সর্বশেষ স্তর। আমরাও ঠিকই অবাক হয়েছিলাম। তবে সময় ক্ষেপন করিনি। খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। নতুন কিছু দেখার উত্তেজনায় পা পিছলানোর ভয় তখন কাজ করেনি।
কখনো গাছের শিকড় ধরে কিংবা ঝুলানো চিকন একটি রশি ধরে উঠতে লাগলাম উপরে। প্রায় চল্লিশ মিনিট উঠার পর দেখা মিলল পাহাড়ের চূড়া।
সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে নিজেদের আবিষ্কার করলাম আসমানের গায়ে ভাসমান। মনে হচ্ছিল মাথার উপর আকাশের মেঘখন্ডগুলো ভাসমান ছাদ। দূরে দৃষ্টি ছুড়ে দিলেই দেখা মিলবে সবুজের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন রঙয়ের দালান, মসজিদের মিনার, নেটওয়ার্কের টাওয়ার। একটু কান পাতলেই মাঝে মধ্যে শোনা যাবে ট্রেনের হুইসেল। পাখিরাও আমাদের উচ্চতার কাছে হার মেনেছিল।
এরপর আবার নীচে নামার পালা। নামতে শুরু করলাম অন্য পথে। একেবারে ঝরণার মূল কেন্দ্রের দিকে। বিশ মিনিটের মাথায় আমাদের খুঁজে পেলাম একটি ঝরণার সামনে। সবুজে ঘেরা ছোট পরিসরের ঝরণা। কেউ কেউ ঝরণার উপর থেকে লাফিয়ে পড়ছে নীচে। এই ঝরণা থেকেই গড়িয়ে পড়া পানি একটু পরে আবার আরেকটি ঝরণা হয়ে নীচে পড়ছে।
সিঁড়ির তাকের মত এক একটি ঝরণা যেন এক একটি তাক। খাঁজ কাটা পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরণার পাশ ঘেঁষে নীচে নামতে পারেন। তবে নামতে ইচ্ছে না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
বেশকিছুক্ষণ জলকেলির পর সূর্য যখন খানিকটা পশ্চিমে হেলে পড়বে তখন পেটের কান্না টের পাবেন।
পাহাড়ে উঠার পথ আপনার শরীরের সমস্ত শক্তি শুষে নিবে। তাই একটি পানীয় জলের বোতল রাখতে হয়। আমরাও ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলাম। ঝরণার এক একটি ধাপ নেমে আবার গা ভিজাই। ১০টাকার বাশের সাহায্যে আবার নামতে শুরু করি পিচ্ছিল পথ ধরে। সর্বশেষ ঝরণাটিতে এসে দাড়াবেন আর ভাববেন, ‘কিছুইতো দেখা হলোনা’।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে চবি সাংবাদিক সমিতি পরিবার। এরপর ফিরে আসার পালা। কারো পায়ে শক্তি কিংবা ইচ্ছে কোনটাই ছিলনা। ব্যস্ত জীবনের মাঝে সামান্য ভ্রমণ আবার সতেজ করে দিতে পারে। যদি তা হয় ঝর্ণারাজ্য খৈয়াছড়ায়।
খরচের খাতায় জমা পড়বে একেবারে কম। হাজার খানেক টাকার মধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন। যদি ডজন খানেক গ্রুপ করে যান তবে খরচ পড়বে পাঁচশোর ও কম। ঝর্ণায় গোসল, হাইকিং কিংবা ছোটখাট কোন পিকনিকের জন্যে খৈয়াছড়াই যথেষ্ঠ। অথবা কোন পারিবারিক ভ্রমণের জন্যেও একমাত্র খৈয়াছড়াই উপযুক্ত। তাই পাঠক চলুন না, ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি গুলো ধুয়ে আসি ঝর্ণার স্বচ্ছ মুক্তাজলে! আর নিয়ে আসি সতেজ বাতাস ভরা বুকে কর্মচঞ্চলতা।
ঢাকা, ০৮ অক্টোবর, (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: