লাইভ প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যারয়েও শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। বুয়েটে নির্যাতনে আবরার হত্যার পর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠে। আলোচনায় উঠে আসে চুয়েটের নাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেন কথিত বড়ভাই। পরিচয়ের নামে শিক্ষার্থীদের মানসিক আবার কখনও শারীরিকভাবে নির্যাতন চলে শিক্ষার্থীদের ওপর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কুদরত ই খুদা হলের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হলে থাকা যে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনাও করতে পারেননি সেই শিক্ষার্থী। প্রথমবর্ষে থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের এক বড় ভাইয়ের বান্ধবীর দেওয়া ফেসবুকের একটি পোস্টে 'সুন্দর হয়েছে' এমন মন্তব্য করায় ছয়-সাতজনের একটি দল সেই শিক্ষার্থীকে ডেকে আনেন ড. কুদরত ই খুদা হলের বর্ধিত একটি অংশে। সবাই মিলে শুরু করেন চড়-থাপ্পড়-লাথি-ঘুষি। তাদের একজন বলেন 'নাচতে'; অন্যজন বলেন 'গাইতে'। আরেকজন বলেন কান ধরে ওঠবস করতে! এভাবেই র্যাগিংয়ের নামে চলে অমানুষিক নির্যাতন। বিগত কয়েক বছরে শতাধিক শিক্ষার্থীকে এমন পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, ক্যান্টিন, গোলচত্বর, ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে র্যাগিংয়ের শিকার হন চুয়েটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট কোনো টর্চার সেল না থাকলেও পুরো ক্যাম্পাসটাই হয়ে ওঠে টর্চার সেল। শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের মাধ্যমে অমানবিক নির্যাতনের প্রমাণও পেয়েছে চুয়েট কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম বর্ষের প্রায় ১৫ শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগে দ্বিতীয় বর্ষের চার শিক্ষার্থীকে হল থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। একই অভিযোগে ৬ মার্চ সুফিয়া কামাল হলের ১৪ ছাত্রীকে হল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের দুই ছাত্রীকে আজীবন এবং ১২ ছাত্রীকে এক বছরের জন্য বহিস্কার করা হয়।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চুয়েটের ১১তম ব্যাচের র্যাগ ডের আগের দিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে ৭-৮ জন যুবক ড. কুদরত ই খুদা হল থেকে কম্পিউটার কৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তাদির শাওনকে তুলে ইমাম গাজ্জালী কলেজের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে অপেক্ষমাণ আরও কয়েকজন মিলে শাওনের ওপর চালায় মধ্যযুগীয় নির্যাতন। তার চোয়াল, বুকের হাড়, মেরুদণ্ডের হাড়, এক পায়ের হাড়ে রড ঢুকিয়ে দেয়, ভেঙে ফেলে হাত ও দাঁত; আঙুলের নখ উপড়ে নেয়, এমনকি জিহ্বাও কেটে নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর ২৮ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে ১৯ দিন অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকে শাওন।
র্যাগিং মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের মার্চে ‘র্যাগিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ' শিরোনামের একটি নোটিশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। তাতেও র্যাগিং বন্ধ হয়নি। গত বছর সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মনীষী রায় টুটুলের ওপর হামলা হয়। বাংলা মদ আনতে শহরে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের এক চিকিৎসককে মারধর করা হয়। এসব অভিযোগই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
চুয়েট ভিসি প্রফেসর রফিকুল ইসলাম বলেন, র্যাগিংয়ের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ইতোমধ্যে আমরা বেশকিছু শিক্ষার্থীকে বহিস্কারের পাশাপাশি কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য হল প্রভোস্টসহ সংশ্নিষ্টদের নির্দেশনাও দিয়েছি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় লেখাপড়ার জায়গা। এখানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। কেউ অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাগিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে চুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ ইমাম বাকের বলেন, এসব কাজ যারা করেন তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী নয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রলীগের থাকতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে। র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আমি নিজে কয়েকজনকে ধরে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছি।
[কার্টেসি : সমকাল]
ঢাকা, ১৯ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: