Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

চুয়েট শিক্ষার্থীর নিথর দেহ: প্রিয় বান্দরবান, আমরা আবার আসছি…

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবার ২০১৮, ০২:৫৭

বান্দরবান লাইভ: আর ফিরে আসবে না। আড্ডায় সময় দেবে না। বন্ধুদের নিয়ে গান, গল্প, আর দলবেধে পড়ার মজাটাই আলাদা এমন কথাও বলবে না। সবই তছনছ হয়ে গেছে। বন্ধুরা হারিয়েছে একজন সজ্জন মানুষ আর মা- বাবা হারিয়েছেন তাদের আপনজন, হৃদয়ের মানিক রতনকে।

অবশেষে পর্যটক আরিফুল হাসান ফাহিমের (২৫) মৃত‌দেহ উদ্ধার ক‌রে‌ছে পু‌লিশ। নিখোঁজের দু‌দিন পর বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রী খাল থে‌কে নিতর দেহটি উদ্ধার করে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থ‌লের পাশে ফাহিমের মৃত‌দেহ ভে‌সে উ‌ঠলে স্থানীয়রা পু‌লিশে খবর দেয়। পু‌লিশ লাশ উদ্ধার ক‌রে ময়নাতদ‌ন্তের জন্য ম‌র্গে পা‌ঠি‌য়ে‌ছে।

পর্যটক ফাহিম

 

এসময় স্থানীয় লোকজনের অনেকেই ফাহিমের নিতর দেহটি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। অনেকেই কেঁদেছেন। থান‌চি থানার ওসি আবদুস সাত্তার ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, গত বুধবার ঢাকার মিরপুরের হেদায়েত উল্ল্যাহর ছেলে আ‌রিফুল হাসান ফা‌হিমসহ ছয়জন পর্যটক গাইডসহ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ক‌রে থান‌চি থেকে রেমাক্রী ভ্রমণে যান।

রেমাক্রী থেকে দর্শনীয় স্থান নাফাকুম ঝরনা দেখ‌তে যাওয়ার সময় রেমাক্রী খা‌ল পাড় হতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান ফাহিম। বন্ধুরা তাঁর গলায় থাকা গামছা ধরে টানার চেষ্টা করেন। গামছা হাতে এলেও ফাহিম ডুবে যায় রেমাক্রী খালে।

ওসি আরও জানান, খবর পে‌য়ে গত দুইদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়‌নি। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থ‌লের পাশে মৃত‌দেহ ভে‌সে উ‌ঠলে স্থানীয়রা পু‌লিশকে খবর দেয়। পু‌লিশ লাশ উদ্ধার ক‌রে ময়নাতদ‌ন্তের জন্য ম‌র্গে পা‌ঠি‌য়ে‌ছে।

জানাগেছে নিয়ম অনুযায়ী বান্দরবানের থানচি থানায় নাম-ঠিকানা লেখার করার পর ছয়জন পর্যটক ও গাইডের (ডানে) ছবি তুলে রাখে পুলিশ। এই ছয়জন পর্যটকের মধ্যে আরিফুল হাসান ফাহিম (বাঁ থেকে তৃতীয়) রেমাক্রী খাল পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছেন।

পর্যটকের মধ্যে আরিফুল হাসান ফাহিম (বাঁ থেকে তৃতীয়) রেমাক্রী খাল পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছেন।

 

স্থানীয় গাইড সূত্রে জানা গেছে, নাফাখুম যেতে সাত-আটবার পাথুরে রেমাক্রী খাল হেঁটে পার হতে হয়। ঘূর্ণিঝড় তিতলির কারণে ওই এলাকায় কিছুদিন টানা বৃষ্টি হয়। এ কারণে রেমাক্রী খাল ও সাঙ্গু নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়।

বিপজ্জনক পরিস্থিতি থাকায় কিছুদিন সেখানে পর্যটকদের যেতে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। পানি কিছুটা কমার পর গত মঙ্গলবার থেকে পর্যটকদের রেমাক্রী পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দেয় প্রশাসন।

ফাহিম ও তাঁর বন্ধুরা ঝুঁকি নিয়ে নাফাখুমের উদ্দেশে রওনা দেন। সাইগংওয়া ইয়াং নামের স্থানে রেমাক্রী খাল পার হওয়ার সময় সবাই যেদিক দিয়ে যায় সেদিক দিয়ে না গিয়ে শর্টকাটে কম সময়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ফাহিম।

ভালো সাঁতার জানায় তিনি রেমাক্রী খালের পানিতে ঝাপ দেন। কিন্তু পানির স্রোত বেশি থাকায় ঝাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি গভীর পানিতে তলিয়ে যান। সে সময় থেকে তার সন্ধান চলতে থাকে। কিন্তু সন্ধান মিলেনি।

নিহত ফাহিম চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আর্কিটেকচার বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশুনা শেষ ক‌রে এক‌টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি ঘোরাঘুরি ছিল তাঁর নেশা। এর আগেও বান্দরবানে এসেছিলেন তিনি।

এবারের বান্দরবানের বাসের টিকেট কাটার পর গত ১২ অক্টোবর টিকেটের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেন, ‘প্রিয় বান্দরবান, আমরা আবার আসছি…’

সবই স্মৃতি

 

কিন্তু অবশেষে ফাহিম বান্দারবান গেলেন। কিন্তু ফিরলেন না। আর কোন দিন আর ফিরবেন না। বিদায়... আল বিদায় পৃথিবী...

 

ঢাকা, ১৯ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ