Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ক্লাসের ফার্স্টবয় থেকে যেভাবে প্রশ্নফাঁস চক্রের ক্রীড়নক!

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০১৮, ১৯:২২

লাইভ প্রতিবেদক : ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিলেন তিনি। মেধা ও বুদ্ধিমত্তায় ক্লাসের অন্য ছেলেদের চেয়ে ছিলেন আলাদা। জীবনে খুব কম পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছেন। অসম্ভব মেধাবী এই ছেলেটি আস্তে আস্তে অন্ধকারের পথে পা বাড়িয়েছেন। হয়েছেন প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা/ক্রীড়নক। ইচ্ছা ছিল দামি গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনার পর ওই পেশা ছেড়ে দেবেন। তবে এর আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। কারাগারের অন্ধ কক্ষে এখন তার সময় কাটছে। বলছি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র রাকিবুল হাসানের গল্প। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কেন এবং কিভাবে ওই পথে এসেছেন তা জানিয়েছেন।

রাকিবুল হাসান জানান, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। তার সিট পড়ে ময়মনসিংহের সৈয়দ নজরুল কলেজে। আইসিটি পরীক্ষার দিন ৯টা ২০ মিনিটে হলের কাছাকাছি পৌঁছলে রাকিবুল দেখেন, অন্য শিক্ষার্থীরা হাতে হাতে মোবাইল নিয়ে কিছু পড়ার চেষ্টা করছেন। কৌতূহলবশত তিনি এগিয়ে যান। তখন সকলে বলাবলি করছিল, 'তারা প্রশ্ন পেয়েছে।' ওই দিন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর রাকিবুল দেখেন, তার ৩১টি এমসিকিউ সঠিক হয়েছে। যারা পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দেখাদেখি করছিল, তাদের ৩৫টি সঠিক হয়েছে। ওই ঘটনায় তার মনের ভেতর তীব্র রাগ ও ক্ষোভ জন্মায়। কলেজের ফার্স্ট বয় হয়ে তিনি অন্যদের চেয়ে নম্বর কম পাবেন- এটা কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না রাকিবুল। পরের উদ্ভিদবিজ্ঞান পরীক্ষার সময় আবারও হলের সামনে মোবাইলে অনেককে প্রশ্ন পড়তে দেখেন। তিনি অনেকের প্রশ্ন সমাধান করে দেন। তখন জানতে পারেন, 'আহমেদ নিলয়' নামে একটি আইডি থেকে তারা প্রশ্ন পাচ্ছেন। ওই আইডি থেকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করা হয়। এ নিয়ে তার প্রচণ্ড কৌতূহল হয়।

রাকিবুল আরও জানান, এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করার পর সাইবার ক্যাফেতে অনেক সময় ব্যয় করতেন তিনি। অধিকাংশ সময় ইন্টারনেটে প্রশ্ন ফাঁসকারী লিংক খুঁজতে থাকেন। এ সময় আসিফ চৌধুরী নামে একটি আইডির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই আইডি থেকে তাকে জানায়, মেডিকেল প্রশ্ন পেতে হলে যেন ফেসবুকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আসিফ চৌধুরী তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার পর মেডিকেলের প্রশ্ন দেওয়ার কথা বলে পাঁচ হাজার টাকা চায়। বিকাশ নম্বরে সেই টাকা দেওয়ার পর আরও ৩০ হাজার টাকা দিতে বলে আসিফ চৌধুরী। রাকিবুল জানান, তার এত টাকা নেই। আসিফ বলে, কোনো বন্ধুর খোঁজ দিতে পারলে সে আর রাকিবুলের কাছ থেকে টাকা নেবে না। এরপর রাকিবুল তার এক বন্ধুর বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা এনে আসিফকে দেন। শর্ত ছিল, মেডিকেল প্রশ্ন তাকে দেবে। তবে আসিফ টাকা পাওয়ার পর তার ফোন বন্ধ করে দেয়। এরপর বিষয়টি জানাজানির ভয়ে ওই বন্ধুর বাবাও তার টাকা ফেরত নিয়ে খুব বেশি উচ্চবাচ্য করেননি। তবে এরপরই অনলাইনে প্রশ্ন ফাঁসকারী আরও কিছু লিংকের সঙ্গে পরিচয় হয় রাকিবুলের।

২০১৭ সালের শুরুর দিকে নিজেই ভুল তথ্য দিয়ে 'আহমেদ রুদ্র' নামে আইডি খুলে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন সংগ্রহ করে তা অর্থের বিনিময়ে অন্য গ্রুপ ও শিক্ষার্থীদের দিতেন রাকিবুল। এমন নামে আইডি খোলার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁস ও বিক্রির অন্যতম হোতা আহমেদ নিলয়ের নামের প্রথমাংশ আহমেদ নিয়েছেন। আর রুদ্র নামটি রাকিবুলের প্রিয়। দুটি এক করে তিনি 'আহমেদ রুদ্র' আইডি খোলেন। তার গ্রুপের মোট অ্যাডমিন আটজন। যারা ফেসবুকে বলত, তাদের প্রশ্ন লাগবে তাদের গ্রুপে অ্যাড করে নিতেন রাকিবুল। পরীক্ষা শুরুর এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীদের গ্রুপের প্রশ্ন দিতেন। কোনো পরীক্ষার ক্ষেত্রে আগের রাতেও বিভিন্ন লিংকে প্রশ্ন দিয়েছেন তিনি। যারা বিকেল ৫টার মধ্যে টাকা বিকাশ নম্বরে পাঠাতেন, তাদের পরের পরীক্ষার প্রশ্নের জন্য নতুন গ্রুপে অ্যাড করে নিতেন। ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ছড়িয়ে দেওয়া হয় 'আজমল আজাহার' নামের গ্রুপ থেকে। একই বছরের পিইসি পরীক্ষার প্রশ্ন ছড়ানো হয় 'এসো আল্লাহর পথে' নামের গ্রুপ থেকে।

পুলিশের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, রাকিবুল অসম্ভব মেধাবী এক তরুণ। জীবনে খুব কম পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় হয়েছেন। তবে তার মেধাকে খারাপ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তার স্বপ্ন ছিল, দামি গাড়ি ও একটি ফ্ল্যাট কেনার। এরপরই তিনি এই পথ ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে তার আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন তিনি।

জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের একটি ফেইসবুক গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ওই গ্রুপের নাম 'আহমেদ রুদ্র'। এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের খোঁজ নিতে গিয়ে ওই গ্রুপটির সন্ধান পায় পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু এসএসসি পরীক্ষা নয়, এর আগেও পিইসি, জেএসসি, ডেন্টালসহ আরও পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছে 'আহমেদ রুদ্র' আইডি। গ্রুপটির ব্যাপারে অনুসন্ধান করে জানা যায়, নেপথ্যে এটি পরিচালনা করছেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেধাবী ছাত্র রাকিবুল হাসান ও তার সহযোগী আদনাদ হাবিব সাজ্জিল। মূলত রাকিবুলই হলেন এই গ্রুপের মূল অ্যাডমিন। পরীক্ষা শুরুর আগেই রাকিবুল প্রশ্ন সংগ্রহ করে তার গ্রুপের মাধ্যমে টার্গেট করা অন্য গ্রুপ ও শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। এরপর বিকাশের মাধ্যমে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিতেন তারা। পুলিশের কাছে এমন তথ্য রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রমতে, প্রশ্নফাঁসে জড়িত এ গ্রুপটির বিশেষত্ব হলো- এখন পর্যন্ত যেসব গ্রুপের প্রশ্ন ফাঁসের সংশ্নিষ্টতার তথ্য-উপাত্ত মিলেছে, তার প্রায় প্রতিটির সঙ্গে 'আহমেদ রুদ্র'র লিংক পাওয়া গেছে। গত ১০ মার্চ চুয়েট থেকে রাকিবুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। কীভাবে মেধাবী এই তরুণ প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রে ভিড়েছেন, তা শুনে গোয়েন্দারাও বিস্মিত। এরই মধ্যে পুলিশের কাছে ১৬১ ধারা ও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির দেওয়ার পর রাকিবুল বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে।

সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ডিসি আলিমুজ্জামান বলেন, এসএসসিসহ আরও কিছু পরীক্ষার প্রশ্ন অনলাইনে বিক্রিতে রাকিবুল জড়িত ছিল। এ চক্রের আরও কিছু লোকজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ঢাকা, ১৭ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ