চবি লাইভ: কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু নিয়ে ক্রমেই রহস্যের দানা বাঁধছে। পুলিশ ও গোয়েন্দারা হন্যে হয়ে খুঁজছেন মৃত্যুর কারণ। পুলিশ জানিয়েছে দিয়াজের মৃত্যু কেবল আত্মহত্যা বললেই দায়িত্ব শেষ হবেনা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেই রহস্য উদ্ঘটন হবে। আমরা এরপরেই বিষয়টি নিয়ে সামনে এগুবো। তবে এবার দিয়াজের ভগ্নিপতি সারোয়ার আলম এমন একটি তথ্য দিয়েছেন যা হত্যা নাকি আত্মহত্যা। এই রহস্য ঘোচাতে পারে।
তিনি জানিয়েছেন, ‘টেন্ডার নিয়ে দিয়াজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একটি সমঝোতা হয়েছিল। এরপর ২৫ লাখ টাকার একটি চেকও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন সে চেক পাওয়া যাচ্ছে না। ওই ২৫ লাখ টাকার চেক কোথায়?’
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট এলাকায় সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।
সারোয়ার জানান, তার মরদেহ পাওয়ার পর মোবাইল সেটটিও পাওয়া যাচ্ছে না। গত ২৯ অক্টোবর রাতে তার বাসায় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এরপর থেকে ওই বাসায় দিয়াজ একাই থাকতো। তাকে তার মা ও বোন থাকতে নিষেধও করে। কিন্তু দিয়াজ প্রায়ই বলতো, ‘আমার কী দোষ? আমার ওপর কেন হামলা করবে। আমি একাই থাকবো।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন কলা অনুষদ ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য ৭৫ কোটি ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই দুটি দরপত্রের সিডিউল বিক্রি করা হয় ১৮-২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সিডিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতর থেকে কিনতে হয়েছে।
ফরম জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। এসময় টেন্ডারের কাজ পেতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দফতর একটি পক্ষ দ্বারা অবরুদ্ধ ছিল। ফলে ওই নির্দিষ্ট পক্ষ ছাড়া কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিডিউল কিনতে পারেনি। এটি নিয়ে চবি ছাত্রলীগের মধ্যে কয়েক মাস ধরে অান্তঃকোন্দল বিরাজ করছিল।
জানা গেছে, টেন্ডার জমাদানের আগের দিন ২৬ সেপ্টেম্বর ২নং গেট এলাকায় দিয়াজ পক্ষের সহ-সভাপতি মামুনকে চড় মারে আরেক সহ-সভাপতি তায়েফুল ইসলাম তপু। আর এরই জেরে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে গত ২৯ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় আবদুর রব হলের সামনে আড্ডা দেয়ার সময় তায়েফুল হক তপুর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের অপর একটি পক্ষ।
অভিযোগ ওঠে, দিয়াজের নেতৃত্বে মামুন, নাজিম ও তোহা মিলে এই হামলা চালায়। পরবর্তীতে ওই রাতে দিয়াজের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মামলাও হয়।
দিয়াজের ভগ্নিপতি সারোয়ার অভিযোগ করে বলেন, যারা লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে তারাই পরিকল্পিতভাবে আমার শ্যালককে হত্যা করেছে। আমরা শতভাগ নিশ্চিত এটি একটি হত্যাকাণ্ড। দিয়াজকে যে কক্ষে পাওয়া গেছে, সেখানে তাকে অস্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া যায়। খাট থেকে সিলিং ফ্যানের উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, কিন্তু দিয়াজের উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। এটি কোনো আত্মহত্যা নয়।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে ভগ্নিপতি সারোয়ার বলেন, আমরা পুলিশ প্রশাসনের ওপর আস্থা পাচ্ছি না। সুষ্ঠু তদন্তে প্রভাবিত করছে একটি পক্ষ। আমরা মামলার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হবো। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দিয়াজের মৃত্যুর খবর ক্যাম্পাসে এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ বাসার দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় দিয়াজের মরদেহ উদ্ধার করে।
ঢাকা, ২১, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// এআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: