Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

কারমাইকেল কলেজের শতবর্ষ পূর্তি

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বার ২০১৬, ০৩:২৮

 

কারমাইকেল লাইভ: রংপুরের ঐতিহ্যবাহি কারমাইকেল কলেজ আজ শতবর্ষ পেরুল। ঔপনিবেশিক শাসন, পাকিস্তানের শোষণ-নিপীড়ন আর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়সহ তিনকালের সাক্ষী হয়ে ১০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার শতবছর পূর্ণ করলো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কারমাইকেল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল প্রফেসর মো. মোজাম্মেল হক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় উপমহাদেশের বিট্রিশ-বাঙালির শিক্ষা-দীক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রাম, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এক জীবন্ত প্রতীক।

কলেজ কর্তৃপক্ষ শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ‘শতবর্ষে শতপ্রাণ, ঐতিহ্যের জয়গান’ স্লোগান সামনে রেখে আগামী ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর দু’দিনব্যাপী জমকালো অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

মূল আয়োজনের আগে ১০ নভেম্বর কলেজ প্রাঙ্গনে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, কেককাটা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কলেজটির মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ছ’টায় শতবছরে একশ ফানুস উড়িয়ে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে দেয়ার আয়োজন করেন ।

এদিকে ডিসম্বরের মূল অনুষ্ঠানের জন্য শতবর্ষ উদযাপন কমিটির অধীন নিয়মিত কাজ করছে ১৭টি উপ-কমিটি। সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির নিরলস পরিচর্চায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ’কাকাশিস’, ’কানাসাস’, ’স্পন্দন’ ও ’বিতর্ক পরিষদ’ -এর সংস্কৃতিকর্মী শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিমূলক মহড়া চলছে।

ইতোমধ্যে কলেজটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। নিবন্ধিত হয়েছেন কলেজটির বর্তমান ও সাবেক প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক।

প্রফেসর মো. মোজাম্মেল হক জানান, ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড থমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল এই ঐতিহাসিক কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

তার নামানুসারেই কলেজের নামকরণ করা হয় কারমাইকেল কলেজ।

১৯১৭ সালের জুলাই মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই কলেজে আইএ ও বিএ কোর্স খোলার অনুমতি দেয়। সেসময় থেকে প্রায় দু’বছরের জন্য কলেজটির পঠন-পাঠনের কাজ চলে রংপুরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনে।

এরপর ১৯১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনের উদ্বোধন করা হয়।
অবিভক্ত বাংলার যে ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিল এর মধ্যে কারমাইকেল কলেজ রয়েছে প্রথম সারিতে।

ইংরেজ আমলের অবিভক্ত বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ও প্রচারের জন্য অসামান্য খ্যাতির অধিকারী এই কারমাইকেল কলেজ। তৎকালীন রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলসহ অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুড়ি, আসাম ও সংলগ্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।

গাছগালাছি, পাখ-পাখালিতে ভরা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্যে ঘেরা নয়নাভিরাম এই ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় আটশ বিঘা জমি নিয়ে। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রিসহ ২১টি বিষয়ে সম্মান ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়ন করছেন প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থী।

জমিদারি স্থাপত্যের যেন এক অনন্য নিদর্শন এই কলেজের মূল ভবন। চারদিকে সবুজের সমারোহের মধ্যে যেন গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপত্য কীর্তি কারমাইকেল কলেজের শ্বেতশুভ্র ভবন।

কলেজ প্রাঙ্গণে রয়েছে বিস্ময়কর ও দূর্লভ বৃক্ষ ‘কাইজেলিয়া’। এই কাইজেলিয়া বৃক্ষটি বিলুপ্ত প্রজাতির বৃক্ষ। এর বয়সও শতবর্ষ পেরিয়েছে। এটি মূলত আফ্রিকার মহাদেশ থেকে আনা কোন এক বৃক্ষপ্রেমীর স্মৃতির সাক্ষী।

বিলুপ্ত সেই কাইজেলিয়াকে যুগের পর যুগ ধরে রাখতে তৈরি হয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কারমাইকেল কাইজেলিয়া শিক্ষা-সংস্কৃতি সংসদ (কাকাশিস)।

এই খ্যাতিজোড়া প্রতিষ্ঠানে বহু খ্যাতিমান পন্ডিত, গবেষক ও জ্ঞানতাপসের ছোঁয়া রয়েছে। এখানে পড়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের নেত্রী

জাহানারা ইমাম, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, দেশবরেণ্য কথা সাহিত্যিক ও নাট্যকার আনিসুল হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বর্তমান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ এদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে নামকরা আরো অনেকে।

শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর তোফায়েল হোসেন ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, শতবর্ষের এই উৎসবে কলেজটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতুহল কাজ করছে।

শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাত-দিন কাজ চলছে। আশা করছি কলেজটির দেশবরেণ্য সব শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে প্রাণ ফিরে পাবে। কলেজ প্রাঙ্গণ পরিণত হবে এক মহামিলন মেলায়।

 

ঢাকা, ১০, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এএম


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ