মিজানুর রহমান, কক্সবাজার থেকে: বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের উপজেলা টেকনাফ। পাহাড়, নদী ও সমুদ্র সন্নিবেশিত সমৃদ্ধ এই উপজেলা। পর্যটন শিল্পের জন্য অনন্য সম্ভাবনাময়ী একটি উপজেলা টেকনাফ। সেইন্টমার্টিন, টেকনাফ সমুদ্র সৈকত, নাফ জেটি, মেরিন ড্রাইভসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে এই উপজেলায়। সম্প্রতি টেকনাফকে পর্যটন স্পটে রুপান্তরিত করতে নাফের বুকে জেগে উঠা জালিয়ার দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে সরকারের মেঘা প্রকল্প। সাব্রাং টুরিস্ট জোনের কাজও চলমান। নাফ নদী, বঙ্গোপসাগর, পাহাড়ি সম্পদ, লবণ চাষ, মাছ চাষ ও কৃষি কাজ এই উপজেলার মানুষের উপাজর্নের প্রদান উপায়।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা, ইয়াবা ও সন্ত্রাসের আঁকড়া হিসেবে বেশ আলোচনায় এসেছে এই জনপদ। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠে টেকনাফ। সমীক্ষা অনুযায়ী শুধু টেকনাফেই পুলিশের তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ২০৪ জন। মাদকদ্রব্য চোরাচালানের ট্যাগ ব্যবহার করে মাদক নির্মূলের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনও হয়ে উঠে আগ্রাসী। চাঁদাবাজি, মাদক কারবারির তালিকায় নাম দিয়ে অর্থ আর্থসাৎ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, মিথ্যা মামলায় জেল, বাসা বাড়ি লুটপাট ও ভাঙচুর ইত্যাদি হয়ে উঠেছিল নিত্য ব্যাপার। ভয়ে টেকনাফের মানুষও ছিলো চুপ।
ঈদের আগের রাতে (৩১ জুলাই) কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকার বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপরই টেকনাফের বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়টি আলোচনায় আসে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নানা অপকর্ম ও বন্দুকযুদ্ধ বানিজ্যের তথ্য উঠে আসে। টেকনাফের ভুক্তভোগী মানুষও মুখ খুলতে শুরু করেন।
এই ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরিদর্শক লিয়াকত আলী, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও ইন্সপেক্টর লিয়াকতের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া টেকনাফের শিক্ষার্থীদের মতামত কী? শিপ্রা ও সিফাতের বিষয়ে তাদের অভিমত কী? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া টেকনাফের শিক্ষার্থীদের মুখামুখি হয়েছেন ক্যাম্পাসলাইভ২৪ এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মিজানুর রহমান। মেজর (অভঃ) সিনহা হত্যার কান্ড নিয়ে তাদের মতামত:
জাফরুল ইসলাম খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:
মেজর (অবঃ)রাশেদ সিনহা হত্যাকাণ্ড পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা এইরকম একজন চৌকশ সাবেক সেনা অফিসারকে বিচারবহির্ভূত হত্যা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে! টেকনাফের একজন সচেতন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড আমি মোটেও সমর্থন করি না। যে মেরিনড্রাইভ সড়ক বাংলাদেশ তথা এশিয়ার অন্যতম পর্যটন স্পট হওয়ার কথা, সেই মেরিন ড্রাইভ এখন টেকনাফ-কক্সবাজারের মানুষের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের নাম।
গত দুই বছরে প্রায় দু'শ খানেক বিচার বহির্ভূত হত্যা এটাই প্রমাণ করে যে টেকনাফের মানুষ ওসি প্রদীপ কুমারদের মতো গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ দেশ রক্ষকদের কাছে কতটাই জিম্মি। সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ যেহেতু মেজর সিনহার সহকর্মী ছিলো তাই, প্রকৃত ঘটনার রহস্যের সমাধান তারাই ভালো দিতে পারতো।কিন্তু এতোদিন পার হওয়ার পরও তাদের চুপ থাকা জাতিকে রীতিমতো হতাশ করেছে।অতএব, প্রকৃত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি কামনা করছি।
সালাহউদ্দিন আজাদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
আমার মতে মেজর সিনহা খুনের ঘটনাকে নিছক কোন দুর্ঘটনা বলা যাবে না কারণ এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য বের হয়েছে তাতে স্পষ্ট এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। বিশেষ করে পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোনালাপে বিষয়টি পরিষ্কার। এস আই লিয়াকতের গুলিতে মেজর মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরও তাকে সেখানে অনেকক্ষণ ফেলে রাখা হয়। তাকে বাঁচাতে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার মতো কোন মানবিক আচরণ তারা দেখাতে পারেনি। এতে বুঝা যায় তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিলো না। ঘটনার পর টেকনাফ ও কক্সবাজার পুলিশ যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে অনেক ঘাটতি রয়েছে।
ডাকাত সন্দেহে সিনহার প্রাইভেটকারটি আটকানো হয়। অথচ তার আগে ওই প্রাইভেটকারটি বিজিবির একটি চেকপোস্ট অতিক্রম করে এসেছে। কার্য কারণ নীতি অনুসারে বলতে হয় প্রত্যেক ঘটনারই কোন না কোন কারণ রয়েছে এবং সেটি তদন্ত শেষে আমরা জানতে পারবো। তাছাড়া মেজর সিনহার সঙ্গী সিফাত ও শিপ্রা মানসিকভাবে সুস্থ হলে তা আরও বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবো বলে আশাকরি। এমুহূর্তে আমাদের উচিত তাদের দু'জনকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া কিন্তু এখন তার উল্টোটাই আমরা করছি। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব পার্সোনাল লাইফ স্টাইল থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক।
তাছাড়া ভুলে গেলে চলবে না যে তারা এখন এই মামলার রাজসাক্ষী ফলে মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত একটা সিস্টেমের মধ্যে দিয়েই তাদের যেতে হবে। আশা রাখি ওসি প্রদীপ এবং এস আই লিয়াকতদের হাতে অন্যায়ভাবে যেন আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। আমি চাই এই মামলার রায় শেষে দোষীদের সর্বোচ্চ আইনী শাস্তি হোক কিন্তু বিচারবহির্ভূত কোন ক্রসফায়ার না।
মোস্তাফা কামাল পাশা, কক্সবাজার সরকারি কলেজ:
মেজর (অভঃ) সিনহা হত্যার প্রেক্ষপট খেয়াল করলে দেখবেন, রক্ষক ভক্ষক হয়েই এমন একটি নিষ্টুর ঘটনার জন্ম দিল, শুধু তাই নয়- পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে অহেতুক হয়রানি, মামলা, চাঁদাবাজি সহ অসংখ্য অভিযোগ আছে এই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। টেকনাফের সাধারণ জনগন সবসময় উৎকণ্ঠায় থাকে কখন জানি কি হয়ে যায়।
ভাগ্যিস, মেজর সিনহা সেনা অফিসার হওয়ায় ঘটনাটি আলোচনায় এসোছে, না হয় আর দশজন নিরীহ মানুষের মত মেরে বন্দুকযুদ্ধ বলে চালিয়ে দিত এবং পরদিন পত্রিকার শিরোনাম হত বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবাকারবারী নিহত! কী ভয়াবহ পরিস্থিতি চিন্তা করুন,স্বাধীন দেশে এসব কল্পনা করা যায়? সমীক্ষা বলছে- ২০১৮সাল থেকে শুরু হওয়া তথাকথিত ক্রসফায়ারে ২৮৭ জন নিহত হয়েছে। এরপরও কি মাদক কমেছে? প্রশ্ন থেকে যায়- প্রশাসন যদি মাদক নির্মূলে এতই কঠোর হয় তাহলে এদেশে মাদক ঢুকে কীভাবে?
একটা অন্যায়কে আরেকটা অন্যায় দিয়ে কখনোই মোকাবিলা করা যায় না, তাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড কখনোই কাম্য নয়। এতে সমস্যা যেমন মিটেনা বরং অধিকাংশ সময়েই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দেয়। তাই অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা হোক এবং পুলিশ-প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক।
অপরদিকে মেজর সিনহার সহকর্মী শিপ্রা-সিফাত দুজনকেই বিচারবিভাগীয় তদন্তের স্বার্থে নজরে রাখা হোক এবং প্রদীপ- লিয়াকত গংদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। যাতে কলংক কিছুটা হলেও মুছে আর ভবিষ্যতে এধরণের ঘটনা করার কেউ সাহস যেন না পায়। সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত হোক 'কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়'।
আমিনুল বাধঁন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
কক্সবাজারের টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকান্ড ইস্যুটি বর্তমানে "টক অব দ্যা কান্ট্রি" তে পরিণত হয়েছে। রাস্ট্রের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ অবধি এই হত্যাকান্ডটির রহস্য উন্মোচনে পাখির চোখ করে আছেন। এই হত্যাকান্ডের পেছনের গল্প জানতে সরকারিভাবে তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি আদালত কর্তৃক RAB এর মাধ্যমেও ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে অভিযুক্ত আসামীদের আটক করে RAB এর মাধ্যমে রিমান্ড পরিচালনা করে ঘটনা'টির রহস্যের জট খুলার প্রাণান্তকর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করি খুব শীঘ্রই ঘটনার পেছনের রহস্য উন্মোচন হবে।
আপাতত দৃষ্টিতে বুঝা যায়, মেজর সিনহা হত্যাকান্ডটি একটি সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের অংশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যনুযায়ী, মেজর সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে। না হয় হাত উঁচিয়ে নিজেকে অসহায় প্রকাশ করা কাউকে গুলি করার প্রশ্নটা সম্পূর্ণ বে'আইনি।
যতই দিন গড়াচ্ছে ততই থলের বিড়াল বের হতে শুরু করেছে। কিন্তু দু:খের বিষয়, মেজর সিনহার সহযোগী সিফাত আর শিপ্রা শুরু থেকেই অনেকটা নিরব ভূমিকা পালন করে আসছিল। কিছুটা দেরীতে হলেও শিপ্রা মুখ খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু ঘটনার সময়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী সিফাত গণমাধ্যম এড়িয়ে যাচ্ছেন। হয়ত এমনও হতে পারে তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকে সিফাত'কে মুখ খুলতে বারণ করা হয়েছে! মোদ্দাকথা, তদন্তকারী টিমের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোন বিষয়ে স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
অন্যদিকে টেকনাফে ওসি প্রদীপ এবং এসআই লিয়াকত এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। শুনতে কিছুটা অপ্রিয় হলেও টেকনাফে এক প্রকার "প্রদীপ রাজত্ব” কায়েম হয়েছিল। অবৈধ অর্থের মোহ তাদের এই পর্যায়ে নামিয়েছে। তারা যা করেছে সেইটা কোনভাবেই পুলিশিং এর পর্যায়ে পড়েনা। তাদের সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত। তাদের সৃষ্টির পেছনে উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে টেকনাফের কিছু সুবিধাবাদী মুখোশধারী এবং দফাদার, চৌকিদার'দেরও আঁতাত রয়েছে!
দেরীতে হলেও ভুক্তভোগী'রা মুখ খুলতে শুরু করেছে। তাদের ভাষ্যমতে, ওসি প্রদীপ দের চেয়ে টেকনাফের কথিত কিছু মুখোশধারী'রা বেশি ভয়ানক ছিল। পান থেকে চুন কসতেই নাকি ইয়াবা কিংবা ক্রসফায়ারের হুমকি দিত তারা। সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যে পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে যে কাউকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করত! পরে মোটা অংকের কারবার..........!
আবার কোন ইয়াবা কারবারি পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সেসব মুখোশধারী দালাল'দের তৎপরতা বেড়ে যেত। এমনকি পুলিশের যোগসাজশ ছাড়াও আসামীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। বলা হত- টাকা না দিলে তোমার ছেলেকে/ভাইকে/ বাবাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে! ক্রসফায়ারের হাত থেকে বাঁচাতে হলে ৫/১০/২০/৫০ লাখ টাকা দিতে হবে! এইভাবে অনেকে অল্প দিনের ব্যবধানে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গিয়েছে!
আমি চাই টেকনাফে ইয়াবা নির্মূল হোক। কিন্তু তার আগে দরকার সেসব চিহ্নিত মুখোশধারী'দের যথাযোগ্য শাস্তি। আমার মতে, টেকনাফের এ অধ:পতনের পেছনে এরাও দায়ী! পুলিশ প্রশাসনকে ধান্ধা করার পথ বাতলে দিয়েছে তারা। টেকনাফের অধিকাংশ পুলিশকে(সবাই নয়) তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন থেকে ডাইভার্ট করে অবৈধ অর্থের মোহে লেলিয়ে দিয়েছিল এসব সুবিধাবাদীরা। এসব সুবিধাবাদী দের চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বয়কট করা হোক।
পরিশেষে এইটাই কাম্য, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মেজর সিনহার হত্যার সাথে জড়িত সকলের উপযুক্ত শাস্তি হোক যাতে পরবর্তীতে কেউ এমন'টা করার ধৃষ্টতা না দেখায়। কলঙ্কমুক্ত হোক প্রিয় মাতৃভূমি।
ইনশাআল্লাহ্ টেকনাফ ফিরে পাবে তার সেই পুরনো ঐতিহ্য।
সেলিম উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:
গত ৩ ১ জুলাই শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসর প্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। আমার বাড়ি একই ইউনিয়নে হওয়ায় আমি যত টুকু সত্যি জেনেছি সিনহা তার তথ্য চিত্র ধারণ করতে যখন পাহাড়ে যায় ঐ এলাকার মানুষ ডাকাত ভেবেছিল কারণ উখিয়া -টেকনাফে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে পাহাড়ে ডাকাতের আস্থানা হয়ে গেছে ঐ স্থানের লোক জন ডাকাতের ভয়ে সব সময় সন্ত্রস্ত থাকে, ঐ স্থানের কিছু লোকজন সিনহাকে ডাকাত ভেবে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ও ডাকাত মনে গুলি করেছে হইতো। তবে পুলিশ ডাকাত মনে করলে সাথে সাথে গুলি করা মোটে উচিত হয়নি হইতো তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পরে খবর নিলে এই ঘটনাটি ঘটত না।
এখানে সিনহার যেটা ভুলছিল আমার মতে যে পাহাড়ে বর্তমান ও ডাকাতের অভিযান চলছে সেজন্য বর্তমান পরিস্থিতি বিবচনা করে ওনার পাহাড়ে যাওয়ায় বিষয়টি বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তার দেরকে অবগত করা প্রয়োজন ছিল। ঘটনা কোন রহস্য থাকলে সেটা হইতো ইচ্ছাগত হত্যাও বলা যেতে পারে।
জান্নাতুল নাইম সাইমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:
আইন প্রনয়নকারীর যারাই প্রত্যক্ষভাবে দেশ সেবাই নিয়োজিত তাদের ওপর আমাদের আস্থা এবং আমাদের মনে শ্রদ্ধাটা সবসময় একটু বেশিই থাকে। কিন্তু যখনই তাদের কোন একজন বা কোন একটি দল ক্ষমতার সুষ্ঠু ব্যাবহার না করে অপব্যবহার করে, নিয়মের নামে অনিয়ম,আচারের নামে অনাচার সৃষ্টি করে তখনই আমাদের মনে প্রশ্ন ওঠে "সত্যিই কি তারা দেশসেবা করে যাচ্ছে?
তাদের ওপর এতটা আস্থা রাখাটা কি ঠিক হচ্ছে না? ভুল মানুষদেরই কি শ্রদ্ধা করছি?" ঠিক এই প্রশ্নগুলোই মেজর সিনহা হত্যার ঘটনার পর থেকে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মাদক পাচার বন্ধ করাটা বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অনেক জরুরি ও কঠিন একটা কাজ। এই কাজটা করার পাশাপাশি স্থানীয় জনগনকে চেকপোস্টে অহেতুক হয়রানির এবং ভোগান্তির শিকার যেন হতে না হয় সেদিকটাও যেন খেয়াল রাখে কতৃপক্ষ।
সাইফুল্লাহ মনসুর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড খুবই অনভিপ্রেত কিছু পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে টেকনাফ তথা বাংলাদেশে। প্রথমত, এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট দুই বাহিনীর মধ্যে সৃষ্টি করেছে অস্বস্তিকর পরিবেশ। যা কোন দেশের জন্যই কাম্য নয়। দ্বিতীয়ত, এই ঘটনা পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটা নষ্ট করেছে।
টেকনাফের জন্য এটা আরো বেশি সত্য। এর ফলে এই অঞ্চলে অবৈধ মাদক ইয়াবা ব্যবসা আরও বৃদ্ধি পাবে। এই অস্বস্তিকর পরিবেশ, অনাস্থা দূর করতে হলে সিনহা হত্যামামলার দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতেই হবে। টেকনাফের একজন সচেতন নাগরিক হিশেবে রাষ্ট্রের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা।
উল্লেখ্য সকল শিক্ষার্থী কক্সবাজার এলাকার অধিবাসী।
ঢাকা, ২৭ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: