Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ঢাবিতে একই স্থানে দুই দলের কর্মসূচি, অবশেষে মারামারি

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০১৮, ২০:৫৪

ঢাবি লাইভ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) নিপীড়নবিরোধী মানববন্ধনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। রবিবার বেলা ১২টায় শহীদ মিনার এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নিপীড়নবিরোধী মানববন্ধনে দাঁড়ান। এসময় ওই মানববন্ধের পাশেই গুজবে কান দেবেন না ব্যানারে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও মানববন্ধন শুরু করে। বক্তব্য দিতে থাকেন উভয়পক্ষয়ই।

পরে দুই দলই শহীদ মিনার থেকে টিএসসির দিকে রওনা দেয়। এসময় বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামেন এসে উভয় দলের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং ছাত্রলীগের হামলার বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আবারও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও আহত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে মিছিল বের করে আন্দোলকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের কাছে এলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুই অংশে ভাগ হয়ে সামনে ও পেছন থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় তারা প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। ব্যানার ফেস্টুন কেড়ে নেয়। ছাত্রীদের গায়েও হাত তোলা হয়।

জানা যায়, ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় ছিল বেলা ১১টায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে। একই সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের ঢাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার সন্তারা মানববন্ধন করে।

বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে এলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, স্কুল কার্যক্রমবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন, ঢাবি শাখার বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাঁধন, সাধারণ সম্পাদক আল আমীন রহমান, হাজি মুহম্মদ মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, কবি জসিম উদ্দিন হলের সভাপতি আরিফ হোসেন প্রমুখ সেখানে ঘুরাফেরা করে।

শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন শুরু করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বিপরীত মুখে অবস্থান নেয়। এ সময় উভয় গ্রুপের মাইক মুখোমুখি অবস্থান নেয়। মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভাষায় কটূক্তি করতে থাকে। তখন শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যের উত্তরে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলতে শোনা যায়। এ সময় শহীদ মিনারে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে।

মানববন্ধনের পর সোয়া ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে জাতীয় সংগীত পরিবেশ করে। এর কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের উদ্দেশে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসে। মিছিলটি রাসেল টাওয়ারের সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সন্তানরা তাদের সামনে ও পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে।

এতে শিক্ষার্থীদের ২০ জনের মতো আহত হয়। এ সময় শিক্ষকদেরও ধাক্কা দেয় ছাত্রলীগের নেতারা। এতে কয়েকজন শিক্ষক মাটিতে পড়ে যেতে দেখা যায়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আবার শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেয়।

এ মানববন্ধনে উপস্থিত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম। তিনি ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেন, ‘আমার মানিক (রাশেদ) সাধারণ ছাত্র। সে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সময় জড়িত ছিল না। রাজনৈতিক কোনো দল বা দেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত নয়। আমার মানিক এমনকি আমরা কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না।

আমার মানিক শুধু চাকরির জন্য দাবি করেছিল, কোটা কমানোর জন্য আন্দোলন করছিল। ও তো কোনো অপরাধ করেনি। তারপরও ওকে এমনভাবে হয়রানি করা হচ্ছে কেন?’ তিনি বলেন, ‘আমার আর চাকরি দরকার নেই। আমার মানিককে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করে দিলে আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাব। ওকে আর কোনোদিন আন্দোলন করতে দেব না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পরের বাড়িতে কাজ করে আমার মানিককে লেখাপড়া শিখাইছি। ওর আব্বা লোকের জমিতে কামলা দিয়ে বহু কষ্টে সংসার চালিয়েছে। ওর আব্বার পেটে পাথর জমেছে।’

রাশেদের মা সালেহা বেগমের বক্তব্যের সময় বিপরীত মুখে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুল নানা কটূক্তিমূলক কথা বলেন।

প্রফেসর ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছাত্রলীগ বাধা দিচ্ছে। অথচ প্রশাসন বলছে তারা কিছুই জানে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নিশ্চুপ ভূমিকার নিন্দা জানান তিনি।

অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘মস্তিষ্কহীন প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ আমাদের পরিচালনা করেছে। যার ফলে বারবার এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে।’ তিনি আরো বলেন, সবচেয়ে ভালো ছাত্ররাই ঢাবির শিক্ষক হন।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিপদে সকলে এগিয়ে আসতে পারেন না। যারা ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষক সব সময় শিক্ষার্থীবিরোধী হয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাঁড়ানো সকল শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষক অস্তিত্বহীন।

 

ঢাকা, ১৫ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ