Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

কুবিতে দুই বছরে ৮ সাংবাদিক লাঞ্ছিত

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০১৮, ০৪:৪০

আবু নাঈম: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সাংবাদিকদের মারধর, লাঞ্ছনা, হুমকি-ধামকি দেওয়ার ঘটনা বিরামহীনভাবে বেড়েই চলছে। এক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটছে সাংবাদিক লাঞ্ছনার নতুন নতুন ঘটনা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার। এখন পর্যন্ত সাংবাদিক লাঞ্ছনার কোন বিচার করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।

সাংবাদিকরা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ক্যাডার, কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বার বার। সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে পূর্বে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা। এমন ঘটনার বিচার না হওয়ায় বারবার সাংবাদিকরা হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক নেতারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ক্যাম্পাসে ৬ বার সাংবাদিকরা মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। চলতি বছরেও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ক্যাডারদের সাথে ২ বার সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বারই বিষয়টি নানাভাবে এড়িয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

২০১৬ সালের ১৮ মে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জের ধরে সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি এবং কালের কন্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি 'রাসেল মাহমুদকে' লাঞ্ছিত করেন সেকশন অফিসার জাকির হোসেন ওরফে প্রিন্সিপাল জাকির।

জাকির হোসেনের শাস্তির দাবিতে তখন সপ্তাহব্যাপি আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিক সমিতি। কিন্তু তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. আলী আশরাফ কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেননি। অভিযুক্ত জাকির হোসেন ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তখন শিক্ষক সমিতি জাকিরের শাস্তির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করলেও প্রশাসন অদৃশ্য কারনে নিরব ভূমিকা পালন করে।

২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেন তৎকালীন ভিসি। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় বিভিন্ন সময় তিনি সাংবাদিকদের ‘কলম সন্ত্রাস’ বলেও মন্তব্য করেন।

একই বছরের ১৩ মে শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের পরে শাখা ছাত্রলীগ নেতা ও চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) মোস্তফা কামাল সুজন, শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি দ্বীন ইসলাম লিখন, শাহাদাত হোসেন সৌরভ এক সাংবাদিককে মারধর করে।

ঐ বছরের ২২ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের নিয়ে হুমকিমুলক বক্তব্য দেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ। একই বছরের ৯ আগস্ট পেশাগত কাজে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দীনের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকে থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। ঐ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা মানববন্ধনও করেন।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারী কাজী নজরুল ইসলাম হলে শাখা ছাত্রলীগের দু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গেলে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ ইসলাম গল্পের নেতৃত্বে সহ-সভাপতি দ্বীন ইসলাম লিখন, মুনতাসির আহমেদ হৃদয়সহ (ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত) আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাব্রী সাবেরীন গালিবকে বেধড়ক মারধর করে।

পরে গুরুতর আহত অবস্থায় গালিবকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযুক্ত বায়েজিদ ইসলাম গল্পের বিরুদ্ধে গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে লোক প্রশাসন বিভাগের লেকচারার নাহিদুল ইসলামকে লাঞ্ছনার অভিযোগ রয়েছে।

ঐ ঘটনায় তাকে বিশ্ববিদালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করলেও পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির কোন পরামর্শ ছাড়াই ঐ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। অভিযুক্ত মুনতাসির আহমেদ হৃদয়ের বিরুদ্ধেও সাধারণ শিক্ষার্থী ও দলীয় কর্মীদের মারধরের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠাল তলায় ‘দৈনিক পূর্বাশা’র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মাহিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক নুরুদ্দীন রাসেল, শাখা ছাত্রলীগের সদস্য আব্দুর রহমান।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক ঐ দিন প্রক্টরের কাছে বিচারের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সাংবাদিক মাহিকে লাঞ্ছনাকারী নুরুদ্দীন রাসেল ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ দিলে তাতে প্রতিবাদ করায় ক্যাম্পাসের কয়েকজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে।

এমন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে ঘটনাগুলো বেড়েই চলছে বলে মনে করেন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রলীগের বেপরোয়া উশৃঙ্খল কিছু কর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

সাংবাদিক লাঞ্ছনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পূর্বে শিক্ষক লাঞ্ছনা, সাধারণ শিক্ষার্থী মারধর ও সাংবাদিক লাঞ্ছনাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যথা সময়ে ব্যবস্থা নিলেই পরবর্তীতে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা বারবার ঘটত না বলে মনে করেন সাংবাদিক নেতারা।

এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনএম রবিউল আওয়াল চৌধুরী বলেন, ‘এমন ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। পূর্বে অপরাধীদের লাগাম টেনে ধরলে এমনটি হত না। তবে আশা করি নতুন প্রশাসন সাংবাদিক লাঞ্ছনাকারীদের বিচার করবে।’
একের পর এক বিচারহীনতার সংস্কৃতিই এসব ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করে এ শিক্ষক নেতা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মো: মতিউর রহমান হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অপরাধকে কখনও ছোট করে দেখা যায় না। একের পর এক সাংবাদিক লাঞ্ছিত হচ্ছেন তবে বিচার হচ্ছে না এতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ হচ্ছে। এখনই উচিৎ অন্যায়কারীদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করা অন্যথায় ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 


ঢাকা, ০২ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ