ইউএপি লাইভ: ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) ৮ম সমাবর্তনে জমজমাট মোবাইল বাণিজ্য হয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার নাকের ডগার সামনেই একদল শিক্ষার্থী কিছুক্ষন সময়ে হাতিয়ে নিল লাখ টাকা।
জানা গেছে, ওই সমাবর্তনে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এসেছিলেন। পূর্ব থেকেই ঘোষণা ছিল মোবাইল ফোন ও ব্যাগ না আনতে। কিন্তু অনেক অবিভাবক ও বেশ কিছু শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন নিয়ে আসেন অনুষ্ঠানে। পড়েন বেকায়দায়।
এই সুযোগে ১৫/১৬ জন শিক্ষার্থীর একটি চক্র মিলে খুলে বসেন রাজধানীর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা সংলগ্ন মাঠে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ৮ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২টি বুথ। বিভিন্ন লোকজনকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যান তাদের বুথে।
দাবী করেন প্রতি মোবাইল ফোন প্যাকেটের জন্যে গুনতে হবে দেড়শ টাকা। সংশ্লিষ্টদের দেয়া হতো টোকেন। অন্য একটি বুথে ব্যাগ রাখা হতো। সেখানেও নগদ টাকা ৫০/১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগের টোকেন নিতে হয়েছে। উপায় নেই অনুষ্ঠান শুরু হয়েগেছে প্রবেশে আছে কড়াকড়ি। ভেতরে যেত্পােই হবে। উপায়ন্তর না ভেবে কিছুক্ষনের জন্যে গুনতে হয়েছে দেড়শ টাকা। কোন কোন জনকে গুনতে হয়েছে ২৫০ থেকে ৩শ টাকা।
রসনা নামের একজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে অভিযোগ করে জানান, আমরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অথচ আমাদের অনুষ্ঠানেই এক ধরনের চাঁদাবাজি হলো। আমরা কিছুই করার ছিলনা। আমরা র্কতৃপক্ষকে জানিয়েছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দেড়শ টাকা নিয়েই ছাড়লো। আমার অবিভাবকদের কাছে মুখ দেখাতে পারিনি। সিএসইয়ের শিক্ষার্থী সম্পা একই অভিযোগ করেন। বলেন, একোন কাণ্ড এক ঘন্টার জন্যে দেড়শ টাকা দিতে হলো।
এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ফয়সাল, নয়ন, সম্রাটসহ ১৫/১৬ জন শিক্ষার্থী মিলে দুটি বুথ চালু করেদেন। সেখানে একটিতে কেবল রাখা হতো মোবাইল ফোন। অন্যটিতে রাখা হতো ব্যাগ। আমিনুল নামের একজন অবিভাবক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, জামিলুর স্যার অনেক ভাল মানুষ। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম চাাঁবাজি মেনে নেয়া যায় না। দিনে দুপুরে মোবাইল রাখার নাম করে কেউ ব্যাগ রাখার নাম করে আড়াইশত থেকে তিনশত টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা বিরল। আমরা এটা আশা করি না। এদের শাস্তি হওয়া দরকার।
অপর শিক্ষার্থী সৈকত। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি বার বার বলেছি এটা আশা করি না এখানে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করেছি। শেষ বেলা এই দুর্ণাম নিয়ে যাব। এই জুলুমের শিকার হতে হলো তোমরা এই কাজ কেন করছো। এসময় ২/৩জন এসে নানান ভাবে ধমক দিয়ে চলে যায়। আর বলে একটু আধটু এসব তো হবেই। এতে দোষের কি?।
আয়োজকরা এর জন্য কুপনও বানিয়েছেন। মোবাইল ফোনের জন্য টোকেন নিয়ে মোবাইল জমা রাখেন। আর সঙ্গে সঙ্গে গুনে নেন নগদ টাকা। এমন কি একজন শিক্ষকের হ্যালমেট রাখা হয়েছিল সেখানে। আয়োজক শিক্ষার্থীরা জানালেন, মাফ নেই। স্যারের কাছ থেকেও টাকা নিতে হবে। এ নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর নানান তর্ক ও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন অনেকেই। তাদের ভাষ্য এই সব কর্মকাণ্ডের সুরাহা কবে হবে জানিনা। তবে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।
এব্যাপারে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ভিসি প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন এসবের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা গতকালই বুথ চালুর ব্যাপারে না করে দিয়েছি। বুথের নামে চাঁবাজির ব্যাপারে প্রোভিসি প্রফেসর ড. এম আর কবির ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমরা এসব বুথ খোলার কোন পারমিশন দেইনি। এ ধরনের কাজ অন্যায়।
সবার চোখের সামনে এসব হয়েছে মোবাইল ফোন আর ব্যাগ রাখার জন্যে টাকা গুনতে হয়েছে এসব কিছু কি আপনাদের কারো চোখে পড়েনি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বলেন, আমরা সমাবর্তন কার্ডে মোবাইল ফোন ও ব্যাগ না আনতে অনুরোধ করেছি। গেল বছর আমরা বুথ চালু করেছিলাম। কিন্তু সেখানেও ঝামেলা ছিল। মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন জিনিষ মিসিং এর বিষয় থাকে। আমরা কখনও টাকা নেইনি। তাই এবার বুথ না খোলার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কয়েকজন শিক্ষার্থী বুথ খোলে টাকা নিয়েছে। তিনি বলেন ওই সব শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিব। রোববারই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সেই সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা, ২৯ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: