ঢাবি লাইভ: পদ্মা মেঘনার মিলন বললেই যে যায়গাটার কথা মনে পড়ে তা হল চাঁদপুর। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসার মধ্যে যে কয়টি জেলার নাম সবার আগে আসে তার একটির নাম চাঁদপুর। এই চাঁদপুর আবার ইলিশের বাড়ী নামেও বেশ জনপ্রিয়।
শহরের ক্লান্তি ভুলে একটিদিন আনন্দে নদী আর প্রকৃতির মাঝে কাটিয়ে আসতে চাঁদপুর হতে পারে আদর্শ জায়গা। যারা শুধু বুড়িগঙ্গার নোংরা কালো পানি দেখেছেন তারা মেঘনার উত্তাল তরঙ্গে সচ্ছ পানিতে নিজেকে হারাতে প্রস্তুত থাকতে পারেন। মেঘনা পদ্মার মিলনে চাঁদপুরকে করেছে রূপবতী আর একই সাথে সৌন্দর্যের একখণ্ড লীলাভূমি।
নদী পথের বড় বড় ষ্টীমার, ছোট জেলে নৌকা, কচুড়িপনার বুক চিরে বয়ে চলা আপনার লঞ্চ মনে গেথে থাকার মত কিছু স্মৃতির পাতা তৈরি করবে। পদ্মা মেঘনার মোহনার বেশ কয়েকটি চর আছে চলে যেতে পারেন সেখানে আর নিতে পারেন সমুদ্রের অনুভূতি।
মাত্র কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের এক ঝাক সমারজর্মী ঘুরে এসেছে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের বিখ্যাত বালুর চর, নিয়ে এসেছে এক বুক সজিবতা আর আনন্দ। সেই ভ্রমণ বৃতান্তই শোনাবো আজ।
সকাল সকাল চলে যাই আমরা সদর ঘাটে আর চেপে বসি বোগদাদীয়া নামক বিশালাকার লঞ্চটিতে। সবার পেটে ছুচোমারা ক্ষিধে থাকায় বুড়িগঙ্গার উটকো পরিবেশেও সকালের নাস্তা করে নিতে কারো একটুও আপত্তি ছিলো না বৈকি। আমাদের লঞ্চ ছাড়ে ঠিক ৮.৩৫ সে। আমরা সবার উপরে টপে জায়গা নেই, যদিও সচারাচার এই জায়গায় উঠতে দেয় না সবাইকে।
কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে সাদের রোদ বুঝতে শুরু করি কিন্তু বেশ বাতাস থাকায় আর আনন্দিত থাকায় পাত্তা না দিয়ে আমরা সাদেই অবস্থান নেই। বুড়িগঙ্গার নোংরা জল পেরিয়ে ধলেশ্বরী আর তারপর আমরা মেঘনাতে পড়ি।
আমরা যেন সুখের সাগর পাড়ি দিচ্ছিলাম বড় ভাই, বন্ধু, ছোটভাই মিলিয়ে আমরা লঞ্চের ঠিক সামনে গিয়ে বসি এবং মেঘনার মায়াময় রুপ আর নদীপাড়ের জীবন দেখতে দেখতে এগিয়ে যেতে থাকি, দু একটা বক আর পানকৌড়ির ছবি তোলার চেষ্টা করতে ভুল করিনি, তবে কচুড়িপনা কেটে এগিয়ে যাওয়া ছিলো দেখার মত দৃশ্য।
আমরা চাঁদপুরে পৌছে আগে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্তা করি তারপর আমাদের রিজার্ভ ট্রলারে রওনা হই বালুরচরের উদ্দেশ্যে। বালূড় চর চাঁদপুর রক্তধারা বা মোহনা থেকে মাত্র ২/৩ কিলো দূরে সময় লাগে ১ ঘন্টার কাছাকাছি, কিন্তু ট্রলার ছোট আর নদী বেশ উত্তাল থকায় আমরা সেই একটা থ্রিলার নিতে পেরেছিলাম বৈকি!
যাইহোক চরে পৌছে দেখে সে এক বিশাল কান্ড চর ত না যেন সমুদ্র সৈকত, যারা কক্সবাজার বা কুয়াকাটা যাননি তারা এটাকে সমুদ্র সৈকত ভেবে ভুল করতেই পারেন। শুরু হয় ঝাপাঝাপি, বেশ কয়েকটি লেয়ার আছে তাই সচ্ছ পানিতে ঝাপাঝাপি করতে আপনার বেশ ভালো লাগবে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।
এর পর আমাদের ফুটবল ম্যাচ হয়ে যায় একটি, বাংলাদেশের দুটি বিখ্যাত নদী পদ্মা এবং মেঘনার মোহনায় এই বালুর চরে ফুটবল খেলা সত্যি একটু ভিন্ন রকম আনন্দ, ভিন্ন রকম ভালোলাগা। একসময় ক্লান্ত দেহগুলো আবার ঝাঁপিয়ে পরে মোহনার জলে আর জলাঞ্জলি দেয় সকল ক্লান্তি।
ফিরে আসি রক্তধারাতে আর দুপুরের খাবার শেষ করতেই বিকেল গড়িয়ে এসেছে, ৫ টার লঞ্চে উঠে পড়ি। এর পর লঞ্চের সাদেই পদ্মা-মেঘনার মোহনায় উপভোগ করি এক অসাধারণ সূর্যাস্ত।
টকটকে লাল সুর্যটা যখন মোহনায় অস্ত যাচ্ছিলো চলে যাওয়ার বেদনায় সারা আকাশ লাল করে, সে এক উপভোগ্য বিষয় ছিলো। এর পর একবুক শান্তি আর সুখানুভূতি নিয়ে রাতের লঞ্চ ভ্রমণ করে ফিরে আসি ঢাকাতে।
ঢাকা, ২৪ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: