জবি লাইভ: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অনার্সে ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রলীগের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকায় ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে প্রক্সি দিয়ে ভর্তি হওয়ার অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। আটক দুই ছাত্র হলেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের আরিফ আলমাস আকাশ ও সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আব্দুল্লাহ আল নোমান। এসময় তারা জিজ্ঞাসাবাদে জবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকিব বিন বারির সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন।
জানা যায়, গত ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় রেজিষ্ট্রার দপ্তরে ভূমি আইন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী এলিন শেখের ভর্তির সময় জমা দেয়া ছবির সাথে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের ছবি মিল না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তিনি প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তির কথা স্বীকার করে। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে পুলিশে দেয় জবি কর্তৃপক্ষ। এরপর আদালতে নেয়া হলে তাকে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ৬ মার্চ একই প্রক্রিয়ায় আরও তিন শিক্ষার্থী জালিয়াতির ঘটনা স্বীকার করেন। তাদেরকেও মামলা দিয়ে থানায় দেয়া হয়। এরই অংশ হিসাবে রোববার রেজিষ্ট্রার দপ্তর আরও শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই বাছাইয়ের সময় আরিফ আলমাস আকাশ নামে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের আরও এক শিক্ষার্থীর ছবির গরমিল পায়। এরপর আকাশকে প্রক্টর অফিসে এনে জিঞ্জাসাবাদ করলে সে সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমানের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ভর্তি হওয়ার তথ্য জানান।
জানা যায়, আকাশ ভর্তি হওয়ার পর বিভাগ ও ডিন অফিস তার তথ্য যাচাইবাছায় করে আইটি দপ্তরের মাধ্যমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় আইডি কার্ড দেন। ইতিপূর্বে তিনি নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষায়ও অংশগ্রহন করে আসছেন।
আটক আকাশ জানান, তিনি দিনাজপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ার সময় ওই কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে জবিতে ভর্তি হন। এরপর এইচএসসি পরীক্ষা শেষে নোমানের সাথে যোগাযোগ করে। নোমানও তাকে ভর্তির প্রলোভন দেখায়। ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে সব ব্যবস্থার আশ্বাস দেন নোমান। পরবর্তীতে ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির মাধ্যমে ৭ম মেধাস্থান লাভ করেন। রেজাল্টের ২ দিন পর কৃষকের ছেলে আকাশ জমি বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা যোগাড় করে দেন নোমানকে। ওই টাকা নোমান তার সিন্ডিকেটের বড়ভাই জবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকিব বিন বারীর কাছে পৌছে দেন।
আটককৃত আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, তার বড় ভাই জবি শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম এবং আকিব বিন বারির কাছে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে আকাশকে জবিতে ভর্তি করান।
পরবর্তীতে ছবি সংশোধনী ঝামেলার কথা বলে সাইফুল ইসলাম, আকিব ও নোমান বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরকরে ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আরো ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
সুত্র জানায়, আকিব বিন বারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এর আগে ২০১৫ সালে ৩১ অক্টোবর ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতির অভিযোগে ১৭ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে আকিব বিন বারিও ছিলেন। তিনি জালিয়াতি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে এসব কাজ করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জবি প্রক্টর প্রফেসর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে দুই জনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এদের সাথে আরো দুই জনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা, ১১ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: