লাইভ প্রতিবেদক: শিক্ষাবিদ ও শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববদ্যিালয়ের প্রফেসর ড. জাফর ইকবালরে ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেথ রাসলে চত্বরে সাংস্কৃতিক সংগঠন রণন, গুনগুন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মানববন্ধন করেছে।
ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন “প্রফেসর জাফর ইকবাল বিশেষ করে তরুণ-কিশোরদের মেধা মনন গঠনের ক্ষেত্রে তার লেখার মধ্য দিয়ে যা করে যাচ্ছেন, তা বন্ধ করতেই এ হামলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে প্রগতিবাদী দর্শনের প্রতিফলন না হলে এ সব হামলা আরও বাড়তে থাকবে।” তিনি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
গুনগুনের সভাপতি উমর ফারুক বলেন, “প্রফেসর জাফর ইকবাল বাংলদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। দেশ সঙ্কটে পড়লে তার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়। তারই জীবন যখন অনিরাপদ তখন সাধারণদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবাও যায় না।”
বাংলা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও রণন এর সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখনে একাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর আপেল মাহমুদ, বাংলা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. শফিকুর রহমান, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ওয়াদুদ সাদমান, রণন এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চৌধুরী।
মানববন্ধন শেষে কবি হেয়াত মামুদ ভবনের দক্ষিণ চত্বরে এক ঘণ্টাব্যাপী রণন ও গুনগুনের আয়োজনে জাফর ইকবালের বই পড়া র্কমসূচি পালিত হয়। এদিকে দুপুর ১ টায় প্রফেসর জাফর ইকবালে ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্দের চেতনায় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’।
রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই মানববন্ধন করেন তাঁরা। সংগঠনের সদস্য-সচিব মোহাম্মদ রফিউল আজম খান এর সঞ্চালনায় ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোন্নাফ আল কিবরিয়া তুষার উক্ত প্রতিবাদ-মানববন্ধনে একাত্বতা ঘোষণা করেন।
প্রতিবাদ-মানববন্ধনে শিক্ষকবৃন্দ বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই যারা এদেশে বুদ্ধিজীবী নিধন করতে চায় এটিও তারই ধারাবাহিকতার অংশ।’ বক্তারা বলেন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল শুধু একজন ব্যক্তি নন তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁর মতো ব্যক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে এদেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়।
হামলাকারীদের বিচারের আওতায় এনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকারের প্রতি আহব্বান জানান শিক্ষকবৃন্দ। তাঁরা আরো বলেন, বর্তমান সরকারের সকল অর্জনকে ম্লান করে দেয়ার জন্য একটি পক্ষ যেভাবে লেগে আছে তেমনি দেশকে একটি জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে জাহির করার কাজও করে যাচ্ছে তারা।
সুতরাং সমাজের সকলকে এদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এই ন্যাক্কারজন বর্বোরচিত হামলার বিচারের দাবিতে সব সময় মাঠে থাকার ঘোষণা দেয়া হয় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সংগঠনের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. সরিফা সালোয়া ডিনা, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনের যুগ্ম সদস্য-সচিব তাবিউর রহমান প্রধান, পরিসংখ্যান বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. রশীদুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বকুল কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ।
অন্যদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রেক্ষিতে রবিবার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ড. গাজী মো: মহসিন এবং সাধারন সম্পাদক এম. গোলাম মোস্তফা সাক্ষরিত বিবৃতিতে বিষয়টি জানানা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল দীর্ঘদিন শিশু-কিশোর এবং তরুণদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস ছড়িয়ে দেবার মতো কাজটি নিরলসভাবে করে যাচ্ছিছলেন।
মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির তীব্র রোষানলে থেকেও চালিয়ে গেছেন সাহসী কলম এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন যেকোন অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে। লিখেছেন যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে। উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠি তাকে বহুবার হত্যার হুমকি প্রদান করে আসছিলো। যার ফলশ্রুতিতে গতকাল ঘৃণ্যতম অপকর্ম ঘটেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি আরেকবার মাথা চাড়া দিয়ে জানিয়ে দিলো তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে থাকা সাহসী ব্যক্তিদের প্রাণনাশের সর্বাত্মক চেষ্টায় লিপ্ত। জাফর ইকবালের মতো অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক ব্যক্তির উপর উক্ত হামলার দ্রুত বিচার দাবী করেন। তাঁর আরোগ্য কামনা করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তিনি সদর্পে ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে তাঁর তীক্ষ্ণ লেখনী নিয়ে।
এদিকে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির এই প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় আগামীকাল, ৫ মার্চ, ২০১৮ ইং তারিখে, সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কালো ব্যাজ ধারণ করে মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নেবে বলেও নিশ্চিত করেন।
ঢাকা, ০৪ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: