ইবি লাইভ: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ( ইবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হলে এ ঘটনা ঘটে। এতে সভাপতি গ্রুপের আল-আমিন মিলন,নাইমুল ইসলাম নামের দুই কর্মী ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী হিমেল চাকমা আহত হয়েছে।
তবে আল-আমিন মিলনের অবস্থা গুরুত্বর বলে জানা গেছে। তাকে সহ অন্যান্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী রেজওয়ানুল ইসলামের সাথে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সভাপতি গ্রুপের কর্মী আল-আমিন মিলনের বাকবিতন্ডা হয়।
এক পর্যায়ে রেজওয়ান ও তার বন্ধুরা মিলনকে মারধর করলে সে পালিয়ে হলে( সাদ্দাম হোসেন) আশ্রয় নেয়। এরপর সন্ধ্যা ছয়টায় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের হিমেল চাকমা, নীল, রিয়ন, মিজান, জসিমসহ কয়েকজন হলে প্রবেশ করলে সভাপতি গ্রুপের কর্মী ও ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলামসহ কয়েকজনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে নাইমসহ কয়েকজন হিমেলকে স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর অন্যান্য হল থেকে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা-কর্মীরা এসে নাইমকে তার কক্ষে (৩১৬) না পেয়ে তালা ভেঙে তার কক্ষে ভাঙচুর চালায় এবং হলের অভ্যন্তরে মিছিল দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও ইবি থানার পুলিশের টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে সভাপতি গ্রুপের কর্মী আলামিন হোসেন মিলনের বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সম্পাদক গ্রুপের কর্মী রেজওয়ানুল ইসলাম। এনিয়ে উভয়ের মাঝে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রেজওয়ান ও তার বন্ধুরা মিলনকে মারধর করলে সে সাদ্দাম হলে আশ্রয় নেয়। পরে হল সভাপতি গ্র“পের কর্মীদের নিয়ে হলের সামনে এসে রেজওয়ানকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয় মিলন ও তার সহযোগীরা। এসময় সাদ্দাম হলের সামনে উভয় গ্রুপের কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এতে হল এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সম্পাদক গ্রপের কর্মী হিমেল চাকমা, নীল, মিজান, জসিমসহ কয়েকজন কর্মী সাদ্দাম হলে প্রবেশ করতে চাইলে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা বাঁধা দেয়।
একপর্যায়ে হলের করিডোরে দুই গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে। এসময় হিমেল চাকমা, নীল, নাঈম, শামীমসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাদ্দাম হলে প্রবেশ করে হল সভাপতি নাঈমের কক্ষ ভাংচুর করে। এসময় সাদ্দাম হল ও লালন শাহ হল থেকে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বের হলে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি ও ইবি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত শিক্ষার্থী মিলন জানান, ‘অডিটোরিয়ামে আমার বান্ধবী নিয়ে বসে ছিলাম। এসময় রেজওয়ান ও তার বন্ধুরা বান্ধবীকে যৌন হয়রানি করলে আমি প্রতিবাদ করি। এসময় আমাকে তারা মারধর করে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান বলেন, সম্পাদক গ্র“পের কর্মীরা অন্যায়ভাবে হামলা চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম বলেন, ‘সভাপতি গ্রুপের শিবিরে অনু প্রবেশকারী সজল ও তার কর্মীরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে দুই গ্রুপের কর্মীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ঘটনা শোনা মাত্রই আমি ক্যাম্পাসে এসে আমার কর্মীদের শান্ত করি।’
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিনা উস্কানীতে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা আমার কর্মীর উপর হামলা চালিয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছি। বিচার না পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির কারনে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। বিষয়টি শোনামাত্রই আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে বসে বিষয়টি সমাধান করেছি।’
ঢাকা, ০৩ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: