Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
বাজেটে বরাদ্দ তলানিতে

শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপির হিসাবে শূন্য দশমিক ১ ভাগ কম

প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২২, ২৩:১৫

 বাজেটে বরাদ্দ তলানিতে

আজহার মাহমুদ: শিক্ষা ভবিষ্যতের জন্য শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। আগামী প্রজন্মের ভাগ্য শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করছে। তাই তাদের দিকে অবশ্যই কেবল মানবিক নয় নৈতিক কারণেই নজর বাড়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশুদের যথাযথ শিক্ষার ব্যত্যয় ঘটলে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা অর্থহীন হবে। আমাদের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। তবে দুঃখের বিষয় হলো, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে শিক্ষা বাজেটে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও জিডিপিসহ সার্বিক হিসেবে তা কমেছে। করোনা মহামারি-পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করতে এই বাজেট যথেষ্ট নয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যেসব খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল শিক্ষাখাত। বাজেটে শিক্ষাখাতে টাকার অংক বেড়েছে। কিন্তু এই বাজেটে বরাদ্দ বাড়লেও আকারে কমেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নে এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারিগরি শিক্ষার প্রসারের দর্শন দেখা গেলেও বরাদ্দে এর প্রতিফলন নেই। করোনায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাও আসেনি এ বাজেটে। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট উত্থাপনের পর রাতে শিক্ষাবিদরা এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বলেছেন এটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।

বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছরের মতো শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির ছিল। বাংলাদেশের শিক্ষাখাতের অবস্থা বেশ শোচনীয়। বেশ মন্দা। গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স-এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ ১৩৮টি দেশের মধ্যে ১১২তম অবস্থানে রয়েছে। যা সুখকর সংবাদ নয়। এটা আমাদের শিক্ষাবিদ ও নেতৃত্বকে ভাবিয়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন ও জিডিপির দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত,পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার উপরে থাকলেও জ্ঞান সূচকে আমরা একেবারে তলানির দিকে অবস্থান করছি। জিডিপির ন্যূনতম একটি অংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রেখে কোনো দেশ উন্নত হয়েছে এমন নজির খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। একারণে এদিকে বেশী করে নজর দেয়া উচিৎ বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

আমাদের দেশ আপাতদৃষ্টিতে উন্নয়ন মনে হলেও দীর্ঘ সময়ে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কম থাকায় ভবিষ্যতে এর প্রভাব হবে ভয়ংকর। বিশেষজ্ঞরা এনিয়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে বাজেট কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে বিশিষ্টজনদের অনেক পরামর্শ রয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষাখাতের কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে নজর দিতে হবে তা এখনও স্পস্টভাবে নির্ধারন হয়নি।

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশ থেকে যারা উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে বা হওয়ার পথে তাদের বেশিরভাগেরই শিক্ষাখাতের বরাদ্দ অনেক বেশি। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ছিল শিক্ষাখাতে, যার পরিমাণ ছিল ৫০ দশমিক ৪ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রুপি, যা সরকারি ব্যয়ের ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। নেপাল ২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ রেখেছে মোট বাজেটের ১১ শতাংশ, যা জিডিপির ৪ শতাংশ। ভুটান ২০২১-২২ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রেখেছে শিক্ষাখাতে যার পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন নেপালি রুপি, যা সরকারি ব্যয়ের ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

প্রসঙ্গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জিডিপির ৩ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া শিক্ষাখাতে ব্রাজিলে জিডিপির ৬ শতাংশ, আফ্রিকার দেশ ঘানায় জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ থাকে। তবে বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে আনুপাতিক হিসেবে বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে কম। এটা অবশ্যই আলোচনায় রাখতে হবে।

জানা যায় প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এবার ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই হিসেবে মোট বাজেটের ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিক্ষাখাতে। অথচ জিডিপি আড়াই শতাংশের নিচেই রয়েছে, যা চলতি বছরের জন্য করা হয়েছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘টাকার অংকে বাড়লেও বাজেটে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষাখাতে সিঙ্গেল সেক্টরে নিয়ে আসার প্রত্যাশা থাকলেও সেটি পূরণ হয়নি। তাতে করে মনে হয় বাজেটে শিক্ষায় গুরুত্ব কম।’ এবারের বাজেট সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখানে খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, দ্রব্যমূল্য, ডলারের সঙ্গে টাকার মূল্যমান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একটি চ্যালেঞ্জের বাজেট দেওয়া হয়েছে। অনেক ভালো নির্দেশনা, দর্শন ও বৈষম্য দূরীকরণের কথাও এসেছে।

সাবেক উপদেষ্টা আরো বলে, বিশেষ ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বিষয় রয়েছে। তবে কিছু বিষয় অনুপস্থিতও রয়েছে।’ ‘২০২০-২১ সালে অনেক শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়েছে। তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরাতে একটি বিশেষ নীতিমালার আওতায় উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা জরুরি হলেও সেটি হয়নি। করোনাকালে শিক্ষায়, আর্থসামাজিক যে বৈষম্য হয়েছে, তা দূরীকরণে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হলেও সেই নির্দেশনা সুনির্দিষ্ট নয়।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. তারিক আহসান বলেন, ‘শিক্ষাখাতে আড়াই শতাংশের মতো জাতীয় বাজেটের জিডিপি গড়, বর্তমানে যা আছে আমাদের তার দ্বিগুণ দরকার। তবে আমি আশাবাদী যে, বর্তমানে কারিকুলাম যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, তা বাস্তবায়নে সরকার যথেষ্ট ইতিবাচক। অদূর ভবিষ্যতে আমরা হয়তো বাজেটে একটি ইন্ডিকেটর পাবো। বর্তমানে যেটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি দিয়ে তা বাস্তবায়নে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হবে।’

তিনি বলেন, আগামী বছরের প্রস্তাবিত শিক্ষাখাতের বরাদ্দ দিয়ে অতিমারিতে সাধিত ক্ষতি কতটা কাটানো যাবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা খাতে আমরা বাজেটের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। এটাকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সরকারের নীতিতে সেটিও আছে বলে জেনেছি।’ শিক্ষাখাতে বাজেটের ন্যূনতম ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া উচিত ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাখাতে জিডিপির ৬ শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলে আসছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে পরিণত হওয়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। কিন্তু শিক্ষাখাতে জিডিপির ২ দশমিক ৬ থেকে ৭ শতাংশের বেশি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

গত অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে টাকার অংকে ১৩ হাজার কোটি টাকা অধিক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও তা মোট বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি নয় এবং এটি জিডিপির ২ দশমিক শূন্য ৮ ভাগ। চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২১-২০২২ অর্থবছরে শিক্ষাখাতের জন্য বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও জিডিপির ২ দশমিক শূন্য ৯ ভাগ। চলতি অর্থবছরের তুলনায় টাকার অঙ্কে শিক্ষাখাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপির হিসাবে তা চলতি বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ১ ভাগ কমতে পারে।

ঢাকা, ১০ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিআইটি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ