Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

৩৯ ব্যক্তির একাউন্ট তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বার ২০১৮, ০০:৪৫

বিজনেস লাইভ: ৩৯জন ব্যক্তির একাউন্ট তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের তিন সদস্যের তদন্ত টিম সাতক্ষীরার তালিকাভূক্ত ৩৯ ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব নাম্বার তদন্ত শুরু করছেন।

যাদের ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত হচ্ছে তাদের ব্যাংকিং লেনদেন অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে জানা গেছে। তিন সদস্যের ওই তদন্ত টিমে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক গাজী মনিরুদ্দীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক সালেহ উদ্দীন ও অর্থমন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব ড. এমডি বাশিরুল আলম।

এই তদন্ত টিম প্রথম দিনে ইসলামী ব্যাংক লি: সাতক্ষীরা শাখায় তদন্ত করেন। ৩৯ জনের তালিকার মধ্যে কমপক্ষে ১০ জন ব্যবসায়ীর ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে ইসলামী ব্যাংক লি:, সাতক্ষীরা শাখায়। বাকিদের একাউন্ট রয়েছে অন্যান্য ব্যাংকে। এরপর ন্যাশনাল ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকে অনুসন্ধান চালিয়েছেন তারা।

তাদের একাউন্টে কি ধরনের লেনদেন হয়েছে। এসব টাকা কোথা থেকে একাউন্টে জমা হয়েছে। কি পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। খুঁজা হচ্ছে তাদের লেনদেনের প্রকৃত উৎস। তালিকাভূক্তদের বিরুদ্ধে ভারতে হুন্ডির টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার ৩৯ জনের ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত শুরু হয়েছে তাদের অনেকেই রাতা রাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অতি অল্প দিনেই বিলাশ বহুল গাড়ি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন।

এদের অনেকেই বর্তমানে বৈধ ব্যবসার নামে কোটি কোটি টাকার হুন্ডি, চোরাচালানী, স্বর্ণ পাচার, মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বর্তমানে এদের অনেকেই টাকার পাহাড় তৈরী করেছেন। ভারতেও এদের অনেকেরই রয়েছে বাড়ি-গাড়ি, অঢেল সম্পদ। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অবৈধ এসব টাকার উৎস খুঁজতে এদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো তালিকাভূক্ত ৩৯ ব্যবসায়ীর মধ্যে অনেকেরই রয়েছে জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় জুয়েলার্সের দোকান। যারা জুয়েলারী ব্যবসার আড়ালে হুন্ডি ও স্বর্ণ চোরাচালানী ব্যবসায় জড়িত।

এছাড়া রয়েছে ভোমরার একাধিক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী, কয়েক জন গরু ব্যবসায়ী, কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, একজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন জেলা পরিষদ সদস্য। এদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন হুন্ডি, অস্ত্র, মাদক,স্বর্ণসহ বিভিন্ন চোরাচালানীর সাথে জড়িত।

যেসব ব্যবসায়ীর ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত শুরু হয়েছে তারা হলেন, সাতক্ষীরা জেলা শহরের খান মার্কেটের অংকন জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী গৌর দত্ত, অমিত জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী জয়দেব দত্ত, তালার কুমিরার আদিত্য মজুমদার, ব্রাদার্স জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আশুতোষ দে, আলিপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, জনপ্রিয় জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী সুমন কর্মকার ও বাবু কর্মকার, শ্যামনগরের নকীপুরের বিশ্বজিৎ মন্ডল, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ, শ্রী জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী দীন বন্ধু মিত্র, ঝাউডাঙ্গার এম ভি জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মুকুন্দ ভারতী, ঝাউডাঙ্গার সাগর জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী রবিন্দ্র নাথ দে, আশাশুনির নিউ দে জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী দেব কুমার দে, কলারোয়ার সন্ধ্যা জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী হরেন্দ্র নাথ রায়, আধুনিক জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী গোপাল চন্দ্র দে, তালার দীপা জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী গনেশ চন্দ্র শীল, তালার নিউ জুয়েলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী বাসুদেব দত্ত, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারীর মো: রাশেদুল ইসলাম, পদ্মশাখরার মো: লিয়াকত হোসেন, একই উপজেলার ঘোনার মো: হাবিবুর রহমান, কলারোয়ার বলিয়ানপুরের জালালউদ্দিন গাজী।

এছাড়াও আরো রয়েছে, কলারোয়ার চন্দ্রনপুরের গরু ব্যবসায়ী নাসির, একই উপজেলার কাকডাঙ্গার গরু ব্যবসায়ী ইয়ার আলী মেম্বর, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোশিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দেলোয়ার রাজু, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফা, বৈকারীর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অসলে, ভোমরার ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী, কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা শহরের রয়েল স্যানেটারীর স্বত্ত্বাধিকারী মো: নজরুল ইসলাম, ভোমরার এএস ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী আজিজুল ইসলাম, বাঁকালের ফিরোজ ইন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ফিরোজ হোসেন, বাঁকালের কে হাসান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী খালিদ কামাল, ভোমরার মামা-ভাগ্নে ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী আজহারুল ইসলাম, মেসার্স কাজী ইন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী কাজী নওশাদ দেলোয়ার রাজু, মেসার্স সুলতান ইন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ইসরাইল গাজী, মেসার্স সাব্বির ইন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী শাহানুর ইসলাম শাহিন, মেসার্স নাজিম ইন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী গোলাম ফারুক বাবু (দেবহাটার পারুলিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান), মেসার্স রিজু এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আবু মুসা এবং মেসার্স রোহিত ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী রাম প্রসাদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাংক ব্যবস্থাপক জানান, গত সপ্তাহে ৩৯ জনের এই তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো হয়। এসব ব্যসায়ীদের ব্যাংক লেনদেন (ব্যাংক একাউন্ট ওপেন থেকে আজ পর্যন্ত) অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে সূত্র জানায়।

এসব ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, যে কোন সময় বাংলাদেশের ব্যাংকের তদন্ত টিম সরেজমিন এসে তালিকাভ‚ক্তদের ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত করবেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম সাতক্ষীরা পৌছে গেছে। তদন্ত টিম সোমবার সকাল থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। তবে তদন্তকারী ওই টিমের সদস্যদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

গত সপ্তাহে ৩৯ জন ব্যবসায়ীর এই তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানোর পর ব্যাংক গুলোতে তোলপাড় শুরু হয়।

সাতক্ষীরা ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার (অপারেশন) ছবিউল ইসলাম খাঁন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার ইসলামী ব্যাংকে গিয়েছিলেন। তারা তাদের তালিকা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার যারা গ্রাহক রয়েছেন তাদের হিসাব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ও খোঁজ খবর নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে হুন্ডির টাকা পাচারকারীদের একটি তালিকা প্রকাশিত হয়। ওই তালিকায় সাতক্ষীরার ৩৯ জন ব্যবসায়ীর নাম দেয়া হযেছিল।

 

 


ঢাকা, ০৫ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ