ববি লাইভ: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শের-ই-বাংলা হলের একটি কক্ষে ঢুকে এক ছাত্রলীগ নেতাকে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে হেলমেট ও মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা। এ সময় মহিউদ্দীন আহমেদ ওরফে সিফাত নামের ওই নেতার কক্ষে থাকা তার দুই অনুসারীকেও মারধর করা হয়। বর্তমানে তারা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে অতর্কিত এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহত তিনজনকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অপর দু'জন হলেন ববি'র লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহাদ হোসেন ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম জিহাদ। এ ঘটনার পর ববি ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শের-ই বাংলা হল এবং ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
হামলার বিষয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশের বন্দর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, হামলার পর আমরা হল পরিদর্শন করেছি। সিটিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতেও অভিযান চলছে। নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এই হামলার সঙ্গে কারা জড়িত এবং কি কারণে হামলা হয়েছে তা মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শের-ই বাংলা হলের আসাসিক শিক্ষার্থী মো. জিয়াসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মঙ্গলবার ভোর ৫টার কিছু পর হলের চারতলায় চিৎকার শুনে তাদের ঘুম ভাঙে। দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন কক্ষের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। পরে অন্য হলের শিক্ষার্থীদের সাহায্য চাইলে তারা এসে দরজা খুলে দেন। পরে চার তলার ৪০১৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখেন আহত অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত ও তার অনুসারী ফাহাদ ও জিহাদ মেঝেতে পড়ে আছে। তখন তাদের উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শের-ই বাংলা হলের শিক্ষার্থীরা জানান, আহতদের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পেরেছেন হামলাকারীরা সংখ্যায় ১০ থেকে ১৫ জন ছিল। তারা সবাই হেলমেট ও মুখোশ পরা ছিল। হাতে ছিল লোহার রড ও বিভিন্ন ধরনের ধারাল অস্ত্র। প্রায় আধা ঘণ্টা সময় ধরে হামলা চালিয়ে তারা চলে যায়। শিক্ষার্থীদের ধারণা, হামলাকারী দুর্বৃত্তরা হলের পকেট গেট থেকে ঢুকে আবার একই পথে বের হয়ে যায়।
আহত ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাতের অনুসারী এবং শের-ই বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র সৈয়দ রুম্মান বলেন, ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাতের কক্ষে হামলাকারীরা দরজা খুলতে বললে তিনি দরজা খুলে দেন। এরপর দুর্বৃত্তরা কক্ষে ঢুকে মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত ও তার দুই অনুসারীকে বেদম মারধর শুরু করে। ধারাল অস্ত্র দিয়ে উপুর্যপরি আঘাত করতে থাকে। এ সময় মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও তার অনুসারীরা বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে ধরে এনে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়।
শেবাচিম হাসপাতালে চিৎসারত অবস্থায় মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত বলেন, তার ডান হাতের একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মাঝ বরাবর থেকে বাম হাত ভেঙে গেছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। হামলাকারীরা হেলমেট ও মুখোশ পরা থাকলেও মহিউদ্দিন আহম্মেদ কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন বলে তিনি জানান।
ববি'র শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই। মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত দীর্ঘদিন ধরে একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লারর অনুসারী। অপর দিকে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা ক্যাম্পাসে নেই।
ওই পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন রক্তিম হাসান অমিত। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মহিউদ্দিন আহম্মেদ সিফাত শের-ই বাংলা হলের ৪০১৮ নম্বর কক্ষ দখল করে থাকছেন। হল প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। জোরপূর্বক হলে থেকে মহিউদ্দিন আহম্মেদ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর জোর-জুলুম চালান। এজন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা চালাতে পারে।’
এ বিষয়ে শের-ই বাংলা হলের প্রভোস্ট মো. আবু জাফর বলেন, হামলার পর হলে গিয়ে বিস্তারিত জেনেছি। সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ববি'র প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম জানান, হামলার ঘটনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: