Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০
teletalk.com.bd
thecitybank.com
ববি শিক্ষার্থীরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়াবে

শিক্ষা ক্যাডারে ববির সুপারিশপ্রাপ্ত মোহাম্মদ রায়হানের গল্প

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০৩:২৮

ববি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রায়হান

জাকির হোসেন, ববি: মোহাম্মদ রায়হান। বরিশালের কৃতি সন্তান। বুদ্ধি ও মেধায় বরাবরই তিনি পরিবার, এলাকা এমনকি ক্যাম্পাসে ছিলেন পরিচিত মুখ। মনন ও দুরদর্শীতায় বন্ধুমহলে রয়েছে তার খ্যাতি। মা-বাবা, শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছে বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে রয়েছে সুনাম। হালে আলোচিত এক নাম। তিনি পড়াশুনার নিয়ম মেনেই চলাচল করতেন ক্যাম্পাসে। ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মার্কেটিং বিভাগের ১ম ব্যাচের ওই শিক্ষার্থী। বিসিএসের দীর্ঘ জার্নি নিয়ে রায়হানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্যাম্পাসলাইভ২৪ ডটকমের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মো. জাকির হোসেন।

ক্যাম্পাসলাইভ: প্রথমে আপনাকে অভিনন্দন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্তদের মধ্যে আপনি অন্যতম এবং মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বিসিএস ক্যাডার। এব্যপারে আপনার অনুভূতি কি?

মোহাম্মদ রায়হান: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার অনূভুতি সম্পূর্ণভাবে ভাষায় প্রকাশ করাটা একটু কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু নিজেকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অংশ ভেবে বেশ ভালই লাগছে। নিজের ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম ক্যাডার হবার অনূভুতিটাও অন্যরকম। আমি এই ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় নিজেকে গর্বিত মনে করছি।

ক্যাম্পাসলাইভ: আপনার ছোটবেলার গল্পগুলো আমরা শুনতে চাই। কেমন কেটেছে আপনার শৈশব ও কৈশরের দিনগুলো?

মোহাম্মদ রায়হান: আমার শৈশব কৈশোর বারিশালেই কেটেছে। একদম গ্রামীণ পরিবেশেই আমার বেড়ে উঠা। আমার ছেলেবেলার দিনগুলো আসলেই অনেক মিস করি। আজও মনে পড়ে নদীতে সাঁতারকাটা, হাডুডু খেলা ও বন্ধুদের সঙ্গে জম্পেস আড্ডার কথা। স্কুলের ক্লাসের পাশাপাশি দুই একজন বন্ধুদের সঙ্গে এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায় ছুটে বেড়ানোর কথা মাঝে মধ্যেই চোখে ভাসে। তবে আমি ছিলাম একটু ভিন্ন প্রকৃতির। বন্ধুরা আমাকে অনেকটা জোড় করেই বের করে নিত। মা-বাবার বকুনি আমার পড়াশুনার গতিকে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়িয়ে দিত। আজও মিস করি মায়ের বকাঝকা। মিস করি বন্ধুদের। একই সঙ্গে গ্রামের মেঠোপথে চলাফেরা ও স্বজনদের বাড়িতে বেড়ানোর মজাটাই আলাদা ছিল।

ক্যাম্পাসলাইভ: স্কুল, কলেজের দিনগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে যদি বলতেন?

মোহাম্মদ রায়হান: আমি বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং হাতেম আলি কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়েছি। স্কুল কলেজে আমাকে আসলে সেভাবে কেউ চিনতোনা। আমি একটু ইনট্রোভার্ট প্রকৃতির ছিলাম। আমার ফ্রেন্ডসার্কেল ছিল খুব লিমিটেড। তাই আমি আসলে স্কুল কলেজে রিলেটেড সেরকম কিছু এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।

ক্যাম্পাসলাইভ: জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গল্পটা শুনতে চাই।

মোহাম্মদ রায়হান: বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা আসলেই আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ফার্স্ট ব্যাচ হিসেবে আমাদের অনেক স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছিল কিন্তু তার পাশাপাশি আমরা অনেককিছু পেয়েও ছিলাম। আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্যার-ম্যাম সবাই আমাদের প্রতি সবসময় অনেক আন্তরিক ছিলেন। পজিটিভ যেকোনো বিষয়ে তারা অনেক হেল্পফুল ছিলেন। বিশেষ করে আমি আমার টিচারদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমাকে খুবই আদর করতেন আমার শিক্ষক বৃন্দ। আমি তাদের কাছে চিরঋণী।

ক্যাম্পাসলাইভ: এত চাকরি থাকতে বিসিএস দেবেন, এই সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?

মোহাম্মদ রায়হান: সামাজিক মর্যাদা, গ্রহণযোগ্যতা, জব সিকিউরিটি এগুলোই মূলত কারণ ছিলো। আমি সব সময়ই শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলাম। ঝুটঝামেলা মুক্ত জীবনে আমি বিশ্বাসী। তাই আমার বন্ধু মহলও এই ধরনের মানুসিকতা পোষণ করে। আমি সরকারি চাকরিটাকে ইনজয়ইন লাইফ হিসেবেই ভেবে আসছি। তাই সরকারি বিসিএস এর জন্যই প্রস্তুুতি নিয়েছিলাম।

ক্যাম্পাসলাইভ: বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বর্ষ থেকে বিসিএস এর সিদ্ধান্ত নিলেন। কখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন?

মোহাম্মদ রায়হান: আসলে প্রথম দিকে আমার বিসিএস দেবার চিন্তা ছিলোনা। ক্লোজ ফ্রেন্ডের পীড়াপীড়িতে ৩৮তম বিসিএস এর ৩/৪ মাস আগে থেকে প্রিপারেশন নিতে শুরু করি। অনার্স শেষ করেই মূলত বিসিএস এর প্রিপারেশন শুরু করেছিলাম। প্রথমবারেই আলহামদুলিল্লাহ প্রিলিতে চান্স পেয়ে যাই। এতে অনেক মোটিভেশন পাই যা আমাকে পরবর্তীতে রিটেন ও ভাইভাতে সহায়তা করে। আল্লাহ রহমতে ৩৮ থেকেই নন-ক্যাডার এর প্রথম লিস্টেই প্রথম শ্রেণীর একটি চাকরি পেয়ে যাই। এরপর ৪০তম থেকে শিক্ষা ক্যাডার পেলাম।

ক্যাম্পাসলাইভ: প্রথমবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুভূতি কেমন ছিলো?

মোহাম্মদ রায়হান: প্রথমবার মনে হয়ছিলো যে আমার দ্বারা হবেনা। এক্সাম হলে বেশ নার্ভাসনেস কাজ করেছিলো। যদিও কিছুক্ষন পরে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। প্রথম প্রিলি, রিটেন, ভাইভা সবক্ষেত্রেই ভয় কাজ করেছিলো। ধীরে ধীরে সেই ভয়টা কেটে যায়। মনের দিক থেকেই হয়ে উঠি শক্তিশালী। বেড়ে যায় সাহস।

ক্যাম্পাসলাইভ: প্রিলি, লিখিত ও ভাইভার জন্য নিজেকে কীভাবে সাজিয়েছেন?

মোহাম্মদ রায়হান: প্রিলির জন্য আমি ডাইজেস্ট পরেছিলাম আর mp3 prechilam অল্পবিস্তর। কিন্তু পরেরবার আমি ব্যাসিক ভিউ, সৌমিত্র শেখর, competitive english, mp3 (science), math (previous years questions) এগুলাই বেশি পড়েছিলাম। সাথে live mcq app থেকে রেগুলার এক্সাম দিতাম।

মোহাম্মদ রায়হান ক্যাম্পাসলাইভকে আরো জানান, রিটেনের জন্য সৌমিত্র শেখর (বাংলা), word smart for vocabulary, বেসিক ভিউ (আন্তর্জাতিক), এ্যাসুরেন্স (বাংলাদেশ বিষয়াবলী), সাইন্স আওয়ার, ম্যাথ আওয়ার আর সাব্জেক্টিভ এর জন্য প্রিন্সিপাল অফ মার্কেটিং পরেছিলাম। ভাইভার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সংবিধান আর মুক্তিযুদ্ধের উপর বেশি ফোকাস করেছিলাম। এছাড়াও ১ম দুটি চয়েসের উপরে পড়েছিলাম।

ক্যাম্পাসলাইভ: শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিসিএসের জন্য ইংরেজী ও গণিতে বেশি ভয় পায়। ইমপ্রুভ করার জন্য করণীয় কী? এ বিষয়ে কিছু বলবেন?

মোহাম্মদ রায়হান: গণিত আর ইংরেজী বেসিকটা ঠিক করতে হবে। এজন্য গণিতের ক্ষেত্রে ৮-১০ শ্রেনীর বোর্ড বই ফলো করা যেতে পারে। অথবা ম্যাথ আওয়ার বইটাও বেশ ভালো। ইংরেজি গ্রামার এর জন্য ক্লিফস টোফেল বেশ ভালো। তবে কারো কাছে এটা কঠিন মনে হলে মাস্টার্স বইটা ফলো করতে পারে। ভোকাবুলারির জন্য word smart সবচেয়ে ভালো। ইংরেজি সাহিত্যের জন্য মিরাকল বা a handbook on english literature ফলো করা যেতে পারে। এগুলোর পাশাপাশি বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করলে বেশি ভালো হবে।

ক্যাম্পাসলাইভ: বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়ররা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে বিসিএসে ভালো করতে পারবে, বলে আপনি মনে করেন।

মোহাম্মদ রায়হান: বিসিএস প্রস্তুতির জন্য জুনিয়রদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো কৌশল অবলম্বন করে ধারাবাহিকভাবে প্রতিনিয়ত পড়াশুনা করা। মনে রাখতে হবে বিসিএস হচ্ছে কৌশলী, ধৈর্যশীল ও মেধাবীদের জন্য। তিনি আরো বলেন নিয়মিত অধ্যবসায় মনোযোগ সহকারে সমস্যার সমাধান, একাগ্রতা ও শৃঙ্খলাবোধ নিয়ে অধ্যায়ন করলেই সফলতার সেই সোনার হরিণটি কাছে আসবে। তাছাড়া কোন অবস্থাতেই নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যাবেনা।

ক্যাম্পাসলাইভ: আপনার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কী ধরনের স্বপ্ন দেখছেন?

মোহাম্মদ রায়হান: আমি চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক সুনাম অর্জন করুক। আমি আশা করি সামনের দিনগুলিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো পর্যায়ে যাবে। বিসিএস এর বাইরেও তারা তাদের মেধার প্রমাণ দিবে। সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছেলে গুগলে চাকরি পেয়েছে। এটা আসলেই আমাদের সকলের জন্য অনেক গর্বের বিষয়। আমি আশা করি ববিয়ানরা একদিন আরো বড় পরিসরে জাতীয় পর্যায় অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তথা আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

ক্যাম্পাসলাইভ: আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ রায়হান: ক্যাম্পাসলাইভ পরিবারকেও ধন্যবাদ। তোমার প্রতি অনেক শুভকামনা রইলো।

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ