শাহেদুর রহমান রনি : বরাবরের মতো এবছরও ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। একারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলকভাবে প্রতিযোগীতাটাও একটু বেশিই হবে। পরীক্ষায় ভালো করার জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তের ভর্তি প্রস্তুতি সম্পর্কে জানার আগে চলো জেনে নেই ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক কিছু তথ্য ও ভর্তি পদ্ধতি সম্পর্কে।
প্রাথমিক তথ্য : কুয়েটে পুরকৌশল, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল এবং যন্ত্রকৌশল এই ৩টি অনুষদের অধীনে সবমিলিয়ে মোট ১৪টি বিভাগ রয়েছে। এই ১৪টি বিভাগে সবমিলিয়ে মোট আসনসংখ্যা ১০০৫টি। যার মধ্যে ৫টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে, যা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও পার্বত্য এলাকার অধিবাসীদের জন্য। (২০১৭ সালের সার্কুলার অনুযায়ী)
ভর্তি পদ্ধতি : কুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞানে ১৫০, রসায়নে ১৫০, গণিতে ১৫০ ও ইংরেজিতে ৫০ সবমিলিয়ে মোট ৫০০ মার্কের পরীক্ষা হয়ে থাকে।
যেখানে প্রতি বিষয়ে ২৫টি করে মোট ১০০টি MCQ থাকে। যার মধ্যে পদার্থ, রসায়ন, গণিতের প্রতিটি MCQ তে ৬ মার্ক করে এবং ইংরেজির প্রতিটি MCQ তে ২ মার্ক করে থাকে।
ভর্তি পরীক্ষায় সময় থাকে মোট ২ঘন্টা ৩০মিনিট। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ২৫% নম্বর কাটা যায়। তবে সর্বনিম্ন কোন পাশ মার্ক নেই।
ভর্তি প্রস্তুতি : যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র কুয়েটেই MCQ পরীক্ষা হয় তাই এর প্রস্তুতিটাও একটু আলাদা।
"শুরুতেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো মনোযোগ সহকারে দেখে নিও"
তাহলে প্রশ্ন সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পাবে। পড়া শুরু করার আগে কি পড়বে, কিভাবে পড়বে সেটা জেনে পড়া শুরু করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পদার্থবিজ্ঞান : পদার্থবিজ্ঞানের জন্য প্রতিটি অধ্যায়ের সূত্রগুলো ভালো করে পড়ে নিও। আর প্রতিটি অধ্যায়ের টপিকগুলো সম্পর্কে ক্লিয়ার একটা ধারণা রেখো। কারণ কিছু বেসিক প্রশ্ন আসে। আর শাহজাহান তপন স্যার ও ইসহাক স্যারের বইয়ের ম্যাথগুলো করে রেখো। ম্যাথগুলোর একক, এক একক থেকে অন্য এককে রূপান্তর করা এই বিষয়গুলো আয়ত্ত্ব করে নাও। কারণ বেশিরভাগ প্রশ্নে ম্যাথই থাকে।
গণিত : গণিতের জন্য বইয়ের তুলনামূলক ছোট এবং ক্যালকুলেশন একটু জটিল টাইপের ম্যাথগুলো দেখে রেখো। গণিতের যেকোন একটি বই ভালো করে করতে পারলে আর তেমন চিন্তা নেই। সেইসাথে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশ্নব্যাংকের বিগত বছরের MCQ প্রশ্নগুলো একবার চোখ বুলিয়ে নিও। এটি জানা কথা গণিত ভালো করা হচ্ছে পুরোপুরি চর্চার উপর। শর্টকাট টেকনিকগুলো বারবার চর্চা করলে, আর কম সময়ে ম্যাথ সমাধান করা শিখে গেলে গণিতে আর সমস্যা হবেনা।
রসায়ন : রসায়নের জন্যও যে অধ্যায়ে ম্যাথ আছে সেগুলো ভালো করে দেখে নিও এবং জৈব রসায়ন অধ্যায়ের বিক্রিয়াগুলো দেখে নিও। কোন যৌগ থেকে কোন যৌগ উৎপন্ন হয়, কোন যৌগের সাথে কোন যৌগের বিক্রিয়ায় কি হয় এবং সেই যৌগ থেকে আর কী কী উৎপাদন করা যায় সেগুলো দেখে নিও। বইয়ের বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগের রাসায়নিক গঠন, নামগুলো শিখে নিও। আর রসায়নে যেহেতু জ্ঞাননির্ভর প্রশ্ন বেশি থাকে তাই রসায়নে ভালো করতে হলে মুখস্ত টাইপ অধ্যায়গুলোতেও জোড় দিতে হবে।
ইংরেজি : ইংরেজিতে Functional English এর উপর ভিত্তি করেই প্রশ্ন হয়। Parts of Speech, Correction, Translation, Vocabulary, Phrase, Synonym, Antonyms, Preposition এগুলো ভালো করে দেখে নিও। ইংরেজি হচ্ছে এমন যে যত শিখবে, সে ততই ভালো করবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
১. কুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরের অপশনগুলো থাকে একটু ব্যতিক্রমী টাইপের। অনেক প্রশ্ন থাকবে যা সূত্র বসিয়ে ক্যালকুলেটর চাপলেই উত্তর চলে আসে। ঝামেলাটা সেখানেই। মনে করো, একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর ৫.২০৭। কিন্তু ধর প্রথম অপশনেই আছে ৫.২০ যা দেখে অনেকেই বৃত্ত ভরাট করে ফেলবে। কিন্তু পরের অপশনেই আছে ৫.২০৭। সঠিক উত্তর তো ৫.২০৭। সেক্ষেত্রে সে নেগেটিভ মার্কিং খাবে। তাই ক্যালকুলেশন যত সূক্ষ্ম করতে পারবে ততই ভালো, আর সবগুলো অপশন দেখে তারপর বৃত্ত ভরাট করবে।
২. কোনমতেই হতাশ হয়ে যেও না। কে কতটুকু পারে তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কে কতটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলো। তুমি যা পারো তা সঠিকভাবে উত্তর করতে পারলেও তোমার চান্স হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। তাই মোটেও হতাশ বা ঘাবড়ে যেও না। ভয় পেয়ে যেও না পরীক্ষার হলে। যদি কোন প্রশ্ন সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকে তাহলে সেটি উত্তর করার প্রয়োজন নেই। স্কিপ করে পরের প্রশ্ন উত্তর করবে।
সবশেষে, আমাদের প্রাণের এই কুয়েট ক্যাম্পাস তোমাদের মতো নবীনদের অপেক্ষায়। ভালো করে প্রস্তুতি নাও আর ভালো করে পরীক্ষা দিও। তোমাদের সকলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
শাহেদুর রহমান রনি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ০১ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: