Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

৫৫ বছর বয়সে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় বসছেন বেলায়েত

প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২, ০১:৫৯

বেলায়েত শেখ

ঢাবি লাইভ: শিক্ষার কোনও বয়স নেই, এই কথাটাই বাস্তবে দেখিয়ে দিলেন বেলায়েত শেখ। দরিদ্রতা আর বয়স কোনোটাই কখনও দাবিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। প্রথম দুই ছেলেকে বিয়ে করিয়ে মেয়েকে পাত্রস্থ করে নাতনির মুখ দেখেছেন। তৃতীয় সন্তানের সঙ্গে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছেন বাবা-ছেলে দুজনেই।

বেলায়েত শেখ গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কেওয়া পশ্চিম খণ্ড (দারোগারচালা) এলাকার মৃত হাছেন আলী শেখের ছেলে। দুই ছেলে ও এক মেয়ের পিতা বেলায়েতের বয়স এখন ৫৫ বছর। নানাবাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জে শৈশব কেটেছে তার। আগামী ১১ জুন অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের) ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেবেন তিনি।

১৯৬৮ সালে জন্ম বেলায়েতের। ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল আগ্রহ। প্রবল আগ্রহ থাকলেও দারিদ্র্যের কারণে কূল পেয়ে উঠেন নি তিনি। এত বিপত্তির মাঝে ১৯৮৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা (এসএসসি) যে না মাত্র বসতে যাবে তখনই অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর বাবা হাসেন আলী। পরীক্ষার জন্য ফর্ম ফিলআপের পুরো টাকা ব্যায় হয় বাবার চিকিৎসার পেছনে। পরবর্তীতে যে-না পরীক্ষায় বসতে যাবেন আবারও বিধি-বাম, ১৯৮৫ সালে বন্যা এসে আবার তা ভণ্ডুল হয়ে যায়। এদিকে ১৯৯১-৯২ তে গিয়ে মা অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও বাঁধ সাধে। মা ভক্ত বেলায়েত মনে করেন, “দুনিয়াতে মা বেঁচে না থাকলে এই লেখাপড়া দিয়ে কি হবে।” লেগে পড়েন মাতৃসেবায়। কাঁধে নেন পুরোপুরি সংসার।

এসএসসি দিতে না পারায় মেকানিক্যাল কোর্স করে মোটর গাড়ির ওয়ার্কশপ কাজ শুরু করেন তা দিয়েই চলে সংসার। সঙ্গে ভাই-বোনদের পড়াশোনার দায়িত্ব পড়ে তাঁর কাঁধে। অভাবের মাঝে ভাই-বোনদের উচ্চ শিক্ষা দিতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন বুনেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) উচ্চ শিক্ষা নিয়ে।

বেলায়েত শেখের তিন সন্তান। ১৯৯৪ সালে তার প্রথম ছেলের জন্ম। বিরতি দিয়ে সে এখন গাজীপুরের একটি কলেজে অনার্সে পড়ছে। মাওনা চৌরাস্তায় তাকে স্যানিটারির দোকান করে দিয়েছেন। সম্প্রতি তাকে বিয়েও করিয়েছেন। একমাত্র মেয়ের জন্ম ১৯৯৯ সালে। ইচ্ছে ছিল তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। সেজন্য রাজধানীর নামকরা কলেজে ভর্তিও করিয়েছেন। কিন্তু মেয়ে সেখানে পড়াশোনা না করেই গ্রামে চলে যায়। সেখানে এইচএসসি শেষে একটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হয়। সে অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত পড়েছে। এরপর তার বিয়ে দেন এবং একটি সন্তানের মা হন। ছোট ছেলের জন্ম ২০০৫ সালে। সে এ বছর বেলায়েত শেখের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেছে।

বেলায়েত শেখ বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল সন্তানরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। অনেক আশা ছিল তাদের নিয়ে। কিন্তু তিন সন্তানের কেউই তা পূরণ করতে পারেনি। সেই ক্ষোভ থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি আর ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায়।

তিনি আরও বলেন, শুরুর দিকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেইনি। তবে এইচএসসি পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ায় বাড়তি ভালো লাগা কাজ করল। ভাবলাম, আমি চেষ্টা করলে হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারব। আমার স্ত্রী-ছেলে মেয়েরাও আমাকে পড়ালেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। এরপর শ্রীপুরের মাওনায় রাজধানী থেকে পরিচালিত একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছি। আমার তো বাবা নেই, মারও বয়স হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে অভিভাবক হিসেবে কাউকে যাওয়া লাগতে পারে। এসব চিন্তা করে বড় ছেলেকে অভিভাবক দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বয়স চল্লিশ পার হলে পড়া আর মাথায় ঢোকে না। আমি পড়তে গেলে পড়া সহজে মুখস্থ হয় না, কষ্ট হয়। এজন্য পড়াগুলো আমি বারবার লিখি। লিখতে লিখতে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করি। বাকিটা আল্লাহর দান আর মানুষের দোয়া। বয়স বেশি হলেও নিজেকে মনের দিক থেকে তরুণ ভাবতে পছন্দ করি। ৫৫ বছর বয়সে আগামী ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেব। আল্লাহর কাছে সাহায্য ও সকলের কাছে দোয়া চাই।

ঢাকা, ২১ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ