সুনসান নিরব আইইআর ভবন
Published: 2021-02-12 18:37:20 BdST, Updated: 2021-03-06 00:44:47 BdST
সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি, জবি: বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মনে, শিক্ষা নিয়ে শঙ্কা ছাড়া আর কিছুই নেই। করোনায় সমস্ত কিছু ওলট পালট হয়ে গেছে। প্রথম যেদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম, সেদিনই এর সৌন্দর্য দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম। বৃষ্টিস্নাত সেই অপরুপ নকশাদার প্রশাসনিক ভবনের কাজ দেখে আমার মনের কোনে নিজের অজান্তেই বারংবার উচ্চারিত হচ্ছিলো। ইশ! যদি আমি আবারও এই ক্যাম্পাসে আসতে পারতাম। যদি আমিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯০০০ শিক্ষার্থীর একজন হতে পারতাম।
আগে বলে নেই আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমে পরে গেছি তার নাম-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আলহামদুলিল্লাহ যে, আজ আমি এই ভালোলাগার ক্যাম্পাসেরই একজন শিক্ষার্থী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পুরান ঢাকার এক বিশাল ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনে একটু ছোট হলেও শিক্ষার মানে অন্যকোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়, বরং বেশিই। আড্ডার জন্য, ক্লাসের ফাকে দুদণ্ড শান্তির জন্য আমাদের রয়েছে "শান্ত চত্বর"। লাল আর সবুজের মিশেলে তৈরি এই চত্বর যেন প্রানে স্বাধীনতার উল্লাস জাগায়।
সবচেয়ে পুরনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের 'আহসান মন্জিল' খ্যাত ভবনটি হলো আইআর ভবন।১৮৪৮ সালে তৈরি এই ভবন আজও ঠায় দাড়িয়ে আছে জগন্নাথের ক্যাম্পাসে।১৭২বছরের পুরনো এই ভবনটি আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের" শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট " এর প্রশাসনিক ভবন হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে দীর্ঘ ৫ টি বছর ধরে। প্রায় দুশো বছরের পুরাতন ভবনের নকশায় যে কেউ চোখ রাখলে আজও এই ভবনের প্রেমে পরতে বাধ্য।
"শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট"
আমার এক ভীষন প্রিয় জায়গা। ক্যাম্পাসের বাসে করে সেই সকালে যখন কেউই থাকেনা, আ ই আর এর ক্লাসরুম গুলো শুধু খোলা থাকে, যখন কেউ আসেনা তখনও সেই আমি একলাই বসে থাকি সিড়িগুলোতে। কিন্তু ক্যাম্পাসের অন্যকোন দিকে যাইনা। আসলে যেতেই মন চায়না। এখানে আছে পোগোজ স্কুলের ছাএছাএীরা। যারা সকালেই আসে।তাদের কারো কারো সাথে আবার আসেন অভিভাবকেরা।সেই ছোট ছোট শিশুদের হৈ হৈ করা আনন্দ, ক্যাম্পাসের আর কোন জায়গায় চাইলেও দেখতে পাওয়া যাবে না। আর আমি এই মুহুর্তকে মিস করতে চাইনা বলেই আই ই আর এর ক্লাসগুলোকে ছেড়ে কোথাও যাইনা।
এতো সুন্দর বালির মাঠ দেখতে হলে তো নিঃসন্দেহে আই ই আর এ আপনাকে একবার হলেও পদধূলি দিতেই হবে। আপনি অবশ্যই এর প্রাকৃতিক, সিন্ধতার পরিবেশের মায়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন।
আই ই আর এর দেয়াল ঘেষেই কোট প্রাঙ্গণ।সেখানে দুমিনিট দাড়ালে আপনি বহু উকিলকে দেখতে পাবেন। মাঝে মাঝে ফ্রী তে কিছু ছ্যাঁচড়া আসামির দর্শন পাবেন। আর কোর্ট এর মামলার উওেজনা শেষে তাদের চা সিগারেট এর দোকানে ভীড় জমানোর দৃশ্য আপনাকে একটু হলেও বিচলিত করবে। তখন যদি আপনিই চা খেতে যান না জানি আপনাকেই লাইন ধরতে হয়, সেটা না হয় ভাগ্যের ওপরেই ছেড়ে দেন।
এর পাশেই আছে হিন্দুদের মন্দির।শাঁখারী বাজারের গলি। আপনি যদি হিন্দু হন তাহলে মন্দির দর্শন, আর হোলি তো এক সাথেই সম্পন্নকরতে পারবেন। একেই বুজি বলে "রথ দেখা হলো আবার কলা বেচাও হলো।" আর যদি মুসলিম হন তাহলে না হয় শুধুই উপভোগ করলেন। সমস্যা তো নাই।মানুষ হিসাবে না হয় অন্যএক ধর্মের মানুষের সাংস্কৃতিক রীতিনীতি গুলো দেখলেন।
আহা আজ বিশ্ব করোনা মহামারীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বাইরে অন্য সকল শ্রেনিপেশার মানুষ বের হতে পারলেও শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছে।তাই তারা তাদের জ্ঞানক্ষেএ কে অনেক বেশি মিস করছে। ঢাকাস্থ একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হয়ে আমিও আমার প্রাণের বিদ্যাপীঠকে অনেক অনেক মিস করছি।
আমার সকল আইআর শিক্ষাবিদ সিনিয়রও আমার সহপাঠীদের সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করি। আশা করছি খুব শীঘ্রই তোমাদের সবার সাথে আবার ও আ ই আর এর নব্য সৃষ্ট সবুজ ঘাসের ওপর বসিয়া এক ঘেয়েমি ক্লাসের পাঠ সাঙ্গ করিয়া আড্ডার তুমুল জোয়ার উথলিয়া উঠিবে।
লেখক:
শিক্ষার্থী, ভাষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআইটি